দেশে মোবাইল ফোন কারখানা স্থাপন: অনুমোদন নিয়ে জটিলতা

33

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশেই এখন মোবাইল ফোন তৈরি হচ্ছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি এ পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে সনদ (অনুমোদন) দিয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোর বিষয়ে কমিশন অবগত নয়। যেগুলোর বিষয়ে কমিশন অবগত নয়Ñ সেগুলোর বিষয়ে আবারও অনুমোদন বা ভ‚তাপেক্ষ অনুমোদন নিতে হবে। বিষয়টি বিটিআরসির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম ‘কমিশন বৈঠকে’ উঠেছে। কমিশনের সর্বশেষ ২৬৯তম বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। জটিলতা তৈরি হওয়ায় বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বিটিআরসির সনদপ্রাপ্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিশমেন্ট (ক্যাটাগরি ‘এ’ মানের) চ‚ড়ান্ত সনদ এবং ২টি প্রতিষ্ঠানকে সাময়িক সনদ দেওয়া হয়। জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানকে এই সনদ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কোনও কোনোটির বিষয়ে কমিশন অবগত নয়। বিটিআরসি সর্বশেষ গত ১৭ ফেব্রæয়ারি আরএফএল ইলেক্ট্রনিকসকে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিশমেন্ট সনদ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিটিআরসি থেকে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিশমেন্ট সনদ নিয়েছে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড, আলামিন অ্যান্ড ব্রাদার্স, এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কার্লকেয়ার টেকনোলজি বিডি লিমিটেড, আনিরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, ওকে মোবাইল লিমিটেড, বেস্টটাইকুন (বিডি) এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, বাংলাট্রোনিক্স টেকনোলজি লিমিটেড, বেনলি ইলেক্ট্রনিক এন্টারপ্রাইজ কোং লিমিটেড, মাইসেল টেকনোলজি লিমিটেড, ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড, ডিবিজি টেকনোলজি বিডি লিমিটেড, লিনেক্স ইলেক্ট্রনিকস বাংলাদেশ ও আরএফএল ইলেক্ট্রনিকস।
বিটিআরসির কমিশন বৈঠক বলছে, ২৪৩তম কমিশন সভায় ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ১১টি প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিশমেন্ট সনদ দেওয়ার বিষয়টি তাদের অবহিত বা জানানো হয়। কিন্তু ওই সময়ের পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুক‚লে সনদ দেওয়ার বিষয়টি কমিশন থেকে অনুমোদন বা ভ‚তাপেক্ষ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়নি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৩১ অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন বা পরিচালনা বা টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের জন্য পারমিট বা সনদ ইস্যুকরণে কমিশনের অনুমোদন নেওয়ার বিধান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, যেসব কারখানার বিষয়ে কমিশন থেকে অনুমোদন বা ভ‚তাপেক্ষ অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছেÑ সেগুলো বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট (এসএম) বিভাগ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কমিশন বৈঠকে উপস্থাপন করে তা বিটিআরসির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম কমিশন বৈঠক থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ফলে আবারও অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
এ নিয়ে বিটিআরসিতে বিভিন্ন ধরনের কথা হয়েছে, মতবিরোধ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সে কারণে নতুন করে আবারও অনুমোদনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ওই সূত্র আরও জানায়, এ ব্যাপারে অনুমোদন বা ভ‚তাপেক্ষ অনুমোদনের বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি আগামী কমিশন বৈঠকে এ সম্পর্কে সুপারিশ বা মতামত দেবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো সনদ নিয়ে কারখানা চালু ও মোবাইল ফোন উৎপাদন করে দেশের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন রফতানিও করছে। এসব কারখানায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় অনুমোদন নিয়ে এমন জটিলতা এ খাতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা এও প্রশ্ন করেছেন, যেসব কারখানাকে নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হবে বা ভ‚তাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়া হবে, সেগুলো কি অবৈধ প্রতিষ্ঠান? না-হলে কেন আবারও অনুমোদন দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কীসের ভিত্তিতে (গাইডলাইন, নির্দেশিকা, রেফারেন্স) অনুমোদন দেওয়া হয়েছেÑ তা কমিটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই গঠিত কমিটি কমিশন বৈঠকে সুপারিশ বা মতামত তুলে ধরবে।’
জানা যায়, কমিশনের স্পেক্ট্রাম বিভাগ থেকে আজ অবধি সাময়িক সনদ দেওয়া প্রতিষ্ঠান ১৬টি এবং এর মধ্যে চ‚ড়ান্ত সনদ দেওয়া ১৪টি প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিশমেন্ট সনদ ইস্যুর বিষয়টি ভ‚তাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট সংযোজন/উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের আবেদন প্রাপ্তির নির্দেশিকা মোতাবেক সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে, আবেদনকারীর অনুক‚লে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিশমেন্টের সাময়িক বা চ‚ড়ান্ত সনদ ইস্যুর আগে কমিশন সভার (বৈঠক) অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।