নবীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
নবীগঞ্জ উপজেলা সদরের আইনগাঁও-নবীগঞ্জ সিএনজি ষ্ট্যান্ডের দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে গত রবিবার রাতে সংঘটিত ঘটনায় নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং সিএনজি ষ্ট্যান্ডের ম্যানাজার ফারুক মিয়া’র বড় ছেলে বেলাল মিয়া (২৩) হত্যাকান্ডের তিনদিন অতিবাহিত হলেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ বলছে অভিযান চলছে আসামীরা গা-ডাকা দিয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো নিহতের পরিবার মামলা করেনি। মামলা হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চলবে। অপর দিকে নিহত বেলালের বিয়ের ১৮ দিনের মাথায় হাতের মেহেদীর রং মুছার আগেই স্বামীকে হারিয়ে পাগল নববধূ রোমেনা ! আর সংঘর্ষের ঘটনায় বেলালের বড় ভাই সমকালের এজেন্ট ম্যানেজার বিলাল হারিয়েছে চোখ। তাদের পিতা হকার ফারুক দুই পুত্রের শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন। নিহত বেলালের বড় ভাই হেলাল মিয়া (বিএ পরীক্ষার্থী ) প্রতিপক্ষের আঘাতে ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে নিহত বিলালের জানাযায় শরিক হবার জন্য নবীগঞ্জে আসেন। এ সময় মাইকে ভাইয়ের শোক প্রকাশ করতে গিয়ে তার চোখের আলো হারিয়েছে বলে জানায়।
রবিবার বিকালে সন্ত্রাসীদের হাতে ছোট ভাই বেলাল মিয়া খুন হওয়ার খবরে হাসপাতাল থেকে একদিনের ছুটি নিয়ে গত সোমবার লাশের সাথে সিলেট থেকে বাড়ি আসে। ওই দিন বিকালে জেকে হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জানাযার নামাজে পিতার কাঁধে ভর করে উপস্থিত হলে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যে সৃষ্টি হয়। এক ছেলের লাশ, আরেক ছেলে চোখ হারানোর যন্ত্রণায় নির্বাক হয়ে পড়েন পিতা ফারুক মিয়া। অশ্র“সিক্ত হয়ে জনতার কাছে এই নির্মম ঘটনার বিচার দাবী করেন তিনি।
অপর দিকে বিয়ের ১৮ দিনের মাথায় হাতের মেহেদীর রং মুছার আগেই সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হওয়া স্বামী বেলাল মিয়াকে হারিয়ে স্বামীর জন্য পাগল প্রায় রোমেনা বেগম (১৮)। ভালোবেসে প্রায় দেড়মাস আগে বেলাল মিয়ার সাথে বিয়ে হয় নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের বৈঠাকাল গ্রামের রোমানা বেগমের। কে জানতো বিয়ের সাজ মুছে যাওয়ার আগেই ঘাতক সন্ত্রাসীদের নির্মম আঘাতে তার স্বামী ওপারে চলে যাবে। ঘটনার পর থেকেই শোকার্ত স্ত্রী রোমানা বেগম এর আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। বার বার মূর্ছা যাচ্ছে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে। গত সোমবার লাল বেনারশি শাড়ীর বদলে স্ত্রী রোমানার পড়নে শুভা পাচ্ছে বিধবার সাদা শাড়ী। এ দৃশ্য কোন সভ্য সমাজ বা জাতি কখনও কামনা করেনি। অশ্র“সিক্ত রোমানা বেগম জানান, ঘটনার আধা ঘন্টা আগে তার স্বামী বেলাল মিয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাশুর হেলালকে দেখে সিলেট থেকে বাড়ি ফিরে। বিকালে গাড়ী ভাড়া এবং শ্বশুর ফারুক মিয়াকে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য শহরে যায় আর সে ফিরে আসেনি। কিছুক্ষণ পরই খবর মোবাইল আসে সামছু, রায়েছ গং সন্ত্রাসীরা তার স্বামীকে অতর্কিত ভাবে হামলা করে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে পাগলের মতো ছুটে যান হাসপাতালে। জ্ঞান শূন্য স্বামীর সাথে শেষ কথা টুকুও বলতে পারেনি রোমেনা। রোমানা বেগম তার স্বামীর খুনিদের গ্রেফতার পূর্বক ফাঁসির দাবী জানিয়েছেন। পিতা ফারুক মিয়া এক সময়ের নামকরা পত্রিকা হকার সবাই তাকে হকার ফারুক নামে চিনেন। ফারুক মিয়া বলেন তিনি আর সংঘর্ষের ঘটনায় বেলালের বড় ভাই সমকালের এজেন্ট ম্যানেজার বিলাল হারিয়েছে চোখ। পুত্রের সাথে বড় ছেলের চোখ নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা এখন কি নিয়ে বাঁচবেন তিনি। তিনি বলেন আমি মামলা করে কি আমার নিমাইরে ফিরে পাবো। আজ রাতে তিনি থানায় মামলা দিবেন বলে জানান। নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী জানান এ ব্যাপারে এখনো নিহতের পরিবার মামলা করেনি। মামলা হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চলবে। (উল্লেখ্য যে সংবাদপত্র এজেন্ট মুশাহিদ আলীর আপন ভাতিজা নিহত বেলাল ও অন্ধ হওয়া হেলাল)।