রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি

19

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন (বাংলাদেশে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল)। এরই মধ্যে জাপানের ৩০টি কম্পানি এবং অন্যান্য দেশের ১০টি কম্পানি এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিনিয়োগে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিশ্বখ্যাত সিঙ্গার ও জার্মানির কম্পানি রুডলফ।
১৫০ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে কোরিয়া, ভারতসহ অন্যান্য দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেরও। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে জাপানের সহযোগিতায় গড়ে উঠছে বিদ্যুৎ হাব, গভীর সমুদ্রবন্দর ও অন্যান্য স্থাপনা। চীনের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হয়েছে। ভারতের সহযোগিতায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সহসাই শুরু হবে। ২০২৩ সালেই শুরু হতে পারে রাশিয়ার সহায়তায় গড়ে তোলা পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন। পায়রা বন্দরের কার্যক্রম গতি পাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের আংশিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এখন বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ দুটোই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ছোট্ট একটি ভূখ-। অথচ এখানে রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। বেকারত্বের অভিশাপে তরুণসমাজ দিশাহারা। ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে প্রতিবছর বহু বাংলাদেশির সলিল সমাধি হয়। অতীতে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার জঙ্গলে বহু বাংলাদেশির গণকবর পাওয়া গেছে। মানবপাচারের শিকার হয়ে মরুভূমিতেও অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। সেই বাংলাদেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। নতুন নতুন শিল্প, কল-কারখানায় বহু তরুণের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ডিজিটাল শিক্ষা বিকাশের কারণে অনলাইনে কাজ করা তরুণের সংখ্যাও ছয় লাখের বেশি। জানা যায়, মঙ্গলবার উদ্বোধন হওয়া জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলেও এক লাখের বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হবে। দেশের অর্থনীতিতে আজ বড় ধরনের গতি সঞ্চারিত হয়েছে। সব দেশে সব সময় এমনটা হতে দেখা যায় না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই গতি যেকোনো মূল্যে অক্ষুণ্ন রাখা আজ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সম্প্রতি দেশের রাজনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যেভাবে আক্রমণাত্মক ধারায় রাজনীতি এগিয়ে চলেছে, তাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত গতি ধরে রাখা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। রাজনীতির উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের কল্যাণ, তাহলে এমন সংঘাতময় রাজনীতি কেন?
বিশ্বব্যাপী প্রবল অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, উন্নত অনেক দেশেও এরই মধ্যে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি চরম রূপ নিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল এবং গত আগস্টে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গিয়েছিল। সুখবর হলো, তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমছে। আশা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরে তা আরো কমবে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে মূল্যস্ফীতি আবারও বাড়বে। মানুষের কষ্ট বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতি হারাবে। আমরা আশা করি আমাদের রাজনীতিবিদরা অবশ্যই দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ চাইবেন এবং পারস্পরিক সহনশীলতার পরিচয় দেবেন।