জনগণের চলাচলের সুবিধার জন্য বাড়ানো হচ্ছে রেলপথ। তার চেয়েও বেশি বাড়ছে রেলপথের ওপর দিয়ে নতুন নতুন সড়কপথ। ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন লেভেলক্রসিং। এমন অনেক লেভেলক্রসিংয়ে কোনো পাহারার ব্যবস্থা নেই।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে এগুলোকে বলা হচ্ছে ‘অবৈধ রেলক্রসিং’। রেলওয়ে এসব লেভেলক্রসিংয়ের কোনো দায়িত্ব নেয় না, যানবাহন চালকদের নিজ দায়িত্বে পার হতে হয়। ফলে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। আবার লোকবল কম থাকার কারণে অনেক বৈধ লেভেলক্রসিংয়েও পাহারার ব্যবস্থা নেই। পাহারায় যাঁরা থাকেন তাঁদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগও কম নয়। সব মিলিয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা। কিন্তু এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে রেলপথে ৯৭৪টি দুর্ঘটনায় এক হাজার ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১১৬টি দুর্ঘটনাই ঘটেছে লেভেলক্রসিংয়ে, মৃত্যু হয়েছে ১৭৩ জনের এবং আহত হয়েছেন ৩১৪ জন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবার কুমিল্লায় অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। পাঁচ মাস আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অনুরূপ এক দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী প্রাণ হারান। সেই দুর্ঘটনাসহ কিছু বড় দুর্ঘটনার পর লেভেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল। তারপর বিষয়টি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই চলে যায়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারা দেশে তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে, আর লেভেলক্রসিং রয়েছে তিন হাজার ৩৯৮টি। এর মধ্যে এক হাজার ৩৬১টি অবৈধ। অর্থাৎ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), পৌরসভা, ইউনিয়ন কাউন্সিল কিংবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ রেলওয়ের অনুমতি না নিয়ে রেলপথের ওপর দিয়ে সড়ক তৈরি করে দিয়েছে। এগুলোর প্রহরায় রেল কর্তৃপক্ষ কোনো লোকবল দেয়নি। এ ছাড়া প্রতিটি বৈধ লেভেলক্রসিং ২৪ ঘণ্টা পাহারার জন্য তিন শিফটে কমপক্ষে তিনজন লোক প্রয়োজন। সেই হিসাবে লোক প্রয়োজন ১০ হাজার ১৯৪ জন। কারো অসুস্থতা, ছুটিছাটায় ডিউটি করার জন্য আরো বেশি লোক প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে এ কাজে রেলওয়ের লোক আছে মাত্র পাঁচ হাজার ২৫ জন। ফলে অনেক বৈধ লেভেলক্রসিংও অনেক সময় অরক্ষিত থাকে। তাহলে এ সমস্যার প্রতিকার কী? এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে এবং মানুষের মৃত্যু হতেই থাকবে?
সারা দুনিয়ায়ই ট্রেন এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন। আমাদেরও রেলপথ বাড়াতেই হবে। বাড়বে সড়কপথও। আরো বেশি লেভেলক্রসিং তৈরি হবে। এসব লেভেলক্রসিংয়ের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতেই হবে।