বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সম্মেলন

11

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। সীমান্তের কাছাকাছি ঘটা এসব ঘটনায় একাধিকবার গোলা এসে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছে। হতাহতও হয়েছে।
আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বা অন্যান্যভাবে প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। এবার দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত সম্মেলনেও বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শান্তি রক্ষায় দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগ বাড়ানো এবং সীমান্ত অপরাধ দমনে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।
সীমান্তবর্তী দুই দেশের মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয় থাকতেই পারে। কখনো কখনো তার পরিমাণ বাড়তেও পারে। সেসব বিরোধ নিরসনের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। নানা বাস্তব কারণে সেই আলোচনা কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। প্রায় দুই বছর ১০ মাস পর গত ২৪ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে সীমান্ত সম্মেলন। চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান। তা ছাড়া সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধীচক্রও যথেষ্ট সক্রিয়। সাম্প্রতিক সময়ে মানবপাচার, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ আরো কিছু অপরাধ ঘটছে। এসব অপরাধ দমনে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং যৌথ টহল পরিচালনার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তে আটক, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) তাদের মূল আবাসভূমিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয় নিয়েও উভয় পক্ষে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কথা হয়েছে রিজিয়ন ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত সমন্বয় সভা পরিচালনার এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তাত্ক্ষণিক পতাকা বৈঠকে বসার ব্যাপারেও। উভয় পক্ষ আশাবাদী আগামী দিনগুলোতে সীমান্ত সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে।
মিয়ানমার বাংলাদেশের প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুই দেশের মধ্যে অনেক অভিন্ন ঐতিহ্য রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণও কম নয়। আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক নানা সহযোগিতার সঙ্গে উভয় দেশই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আমরা বিশ্বাস করি পারস্পরিক সহযোগিতা রক্ষা করে এগিয়ে গেলে উভয় দেশই উপকৃত হবে। এ জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ আরো বাড়াতে হবে।