সারা পৃথিবীতেই কিডনি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ১৯৯০ সালে মোট মৃত্যুর ২৭তম কারণ ছিল দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি)। ২০১০ সালে এটি মৃত্যুর ১৮তম কারণ এবং ২০২০ সালে ১১তম কারণে পরিণত হয়। বাংলাদেশেও কিডনি রোগের প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে।
অথচ কিডনি রোগ চিকিৎসায় দক্ষ চিকিৎসক ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের মতে, দেশে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হচ্ছে। আর তাদের ৭৬ শতাংশই মারা যাচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপন বা নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে না পারার কারণে।
ধারণা করা হয়, দেশে বর্তমানে দুই কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে তাদের বেশির ভাগের রোগ জটিল রূপ ধারণ করে এবং এক পর্যায়ে কিডনি ফেইলিওর হয়। অধ্যাপক হারুনের মতে, কিডনি ফেইলিওরের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে ক্রনিক নেফ্রাইটিস (৪০ শতাংশ), ডায়াবেটিস (৩৪ শতাংশ) এবং উচ্চ রক্তচাপ (১৫ শতাংশ)। এ ছাড়া আছে প্রস্রাবের সংক্রমণ, পাথরজনিত রোগ, জন্মগত কিডনির রোগ, ওষুধজনিত কিডনির রোগ, ভেজাল খাদ্য, পলিসিস্টিক কিডনির রোগ ইত্যাদি। অথচ ক্রমবর্ধমান এই স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় দেশে দক্ষ চিকিৎসকের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি আছে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাব। জানা যায়, বর্তমানে দেশে ১৪০ জন নেফ্রোলজিস্ট আছেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক ১৬ জন, ২২ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ৩৬ জন সহকারী অধ্যাপক। কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ-সুবিধা আরো কম। প্রশিক্ষিত নার্স, টেকনিশিয়ানেরও অভাব রয়েছে। আইনি জটিলতাও প্রতিস্থাপনের অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। অথচ ডায়ালিসিসের তুলনায় প্রতিস্থাপন সিকেডি চিকিৎসায় অধিক গ্রহণযোগ্য ও সুলভ পদ্ধতি। দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন করা না গেলে যত দিন সম্ভব ডায়ালিসিসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ডায়ালিসিসের সুযোগও খুবই কম। যে কয়টি সরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিসের সুযোগ আছে, সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিসের ব্যয় অনেক বেশি এবং তা বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে।
সারা দুনিয়ায় প্রধানত দুই উপায়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। একটি হচ্ছে আগে থেকে দান করে যাওয়া ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যক্তির কিডনি এবং অন্যটি হচ্ছে স্বেচ্ছায় দান করা জীবিত ব্যক্তির কিডনি। বাংলাদেশে প্রথমটির প্রচলন নেই বললেই চলে। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালের কিডনি প্রতিস্থাপন আইন অনুযায়ী শুধু নিকটাত্মীয়রাই কিডনি দিতে পারে। সেখানেও রয়েছে নানা জটিলতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে দ্রুত যথাযথ আইনগত ও পেশাগত কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন, যারা দাতা ঠিক করবে এবং সুনিয়ন্ত্রিত প্রতিস্থাপনকে এগিয়ে নেবে।