কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্পট মার্কেটে যখন গ্যাসের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী তখন তা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আনা এলএনজি আর দেশীয় গ্যাসের ওপর নির্ভর করেই চলছে বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাত। আর তাই জ্বালানি সংকটে বিঘ্ন্ন ঘটছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এমনকি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। এমন অবস্থায় নতুন উদ্যমে দেশীয় কূপ খননের ধারাবাহিকতায় একের পর এক কূপ থেকে মিলছে গ্যাসের সন্ধান।
শুধু তাই নয় সম্প্রতি ব্রুনাইয়ের সুলতানের সফরকালীন সময়ে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল তার ভিত্তিতে দেশটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস আনার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে ব্রুনাইয়ে। একইসঙ্গে সৌদি আরব থেকেও দীর্ঘমেয়াদে স্বল্পমূল্যে গ্যাস আনার প্রক্রিয়া চলছে। সব মিলিয়ে গ্যাসের বিকল্প বাজারের সন্ধানের পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এমন অবস্থায় আসন্ন নতুন বছর দেশের গ্যাস খাত সুখবর বয়ে আনবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির বাজার যখন টালমাটাল তখন চাহিদা থাকলেও চুক্তির বাইরে এলএনজি দিতে অস্বীকৃতি জানায় কাতার। স্পট মার্কেটে চড়ামূল্যে ভর্তুকি দিয়ে কেনাও ছিল বন্ধ। বিদ্যুৎ সংকট কাটাতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও চলে পুরোদমে। ফলে শিল্প, আবাসিক এমনকি বাণিজ্যিক খাতের গ্রাহকদের গ্যাস সংকটে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। এমন অবস্থায় কূপ খননে জোর দেয় সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২০২২-২০২৫ সময়কালের মধ্যে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্ক ওভার কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে গত ১৯ আগষ্ট ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপে প্রায় ৩৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন কাজ শুরু করে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩৫২৪ মিটার গভীরতায় খনন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। গত ৩ নভেম্বর এখানে ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে বলে জানান খোদ বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এই খনন কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কূপে ৩০ থেকে ৩১ বছর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে। তিনি জানান, এই গ্যাসের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮০৫৯.০৮ কোটি টাকা।
এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ে মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং অন্যান্য পেট্র্রোলিয়াম সরবরাহে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল দুই বছর মেয়াদে বাংলাদেশ এবং ব্রুনাইয়ের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) ব্যবস্থার মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস আনতে প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্রুনাইয়ে টিম পাঠাচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস কীভাবে নিয়ে আসা যায় দেশটি থেকে সে বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। আমরা তাদের নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় আছি। এখন তো সব জায়গাতেই সংকট। যে যেভাবে পাচ্ছে সেভাবেই নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের ব্রুনাইয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। আমাদের কি প্রয়োজন দেশটির দায়িত্বশীলদের কাছে আমরা জানিয়েছি। তাদের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এখন দেখা যাক কি হয়।
শুধু তাই নয় সৌদি আরব থেকেও গ্যাস আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার সৌদি অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তাদের মন্ত্রী আসছেন। ২০২৮-২৯ সালের দিকে সৌদি আরব থেকে গ্যাস নিতে পারবো। আমাদের এখানে সোলারের ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারেও কথা হয়েছে।
তারা সোলারের ক্ষেত্রে ১০০০ মেগাওয়াট এমওইউ করার কথা জানিয়েছে। আমরা আশা করছি আগামীবছর ১০০-১১০ এমএমসি গ্যাস পাবো। পাওয়ারের রিক্রয়্যারমেন্ট ১০ শতাংশ বাড়বে। এদিকে সমুদ্র থেকে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাগর থেকে গ্যাস তোলার জন্য দুইবার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আবারও এখানে টেন্ডার দেওয়া হবে। সাগর থেকে গ্যাস তোলা কষ্টসাধ্য। বিনিয়োগ করেও সফলতা পাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে না। বাপেক্সকে দিয়ে এটা করা যাবে না। তবে বাপেক্স বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে কাজ করতে পারে।