বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আর এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের উপকূলেও। স্বাভাবিক জোয়ারেই এখন অনেক বেশি এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। এর ওপর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা তো আছেই।
তাই উপকূলীয় জনজীবনকে রক্ষায় নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই একটি হচ্ছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। কিন্তু সেই বাঁধ নির্মাণের যে হাল, তা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছে না উপকূলের মানুষ। জানা যায়, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ হস্তান্তরের আগেই তাতে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রকাশিত আলোকচিত্রেও সেই ফাটল দৃশ্যমান। স্থানীয় লোকজন জানায়, ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের ২৬ কিলোমিটার অংশ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে বলেশ্বরতীরের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে মূল বেড়িবাঁধ, সিসি ব্লক, গাইড ওয়াল ও জলকপাটে ভাঙন ও ধস শুরু হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি-১) গ্রহণ করা হয়েছিল। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে তিন দফা সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাঁধ হস্তান্তরের কথা রয়েছে; কিন্তু এর আগেই বাঁধের নানা অংশে ভাঙন ও ধস শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী উপকূলীয় এই এলাকার মানুষ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগে যতটা আশান্বিত হয়েছিল, এখন তারা ততটাই হতাশ। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণে যথাযথ মান রক্ষিত হচ্ছে না এবং নির্মাণকাজের তদারকিও সঠিকভাবে হচ্ছে না। এ ছাড়া বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনায়ও ত্রুটি ছিল। নদীর ভাঙন ক্রমেই বাঁধের কাছাকাছি চলে আসছে। তাই স্থানীয় লোকজন মনে করে, দ্রুত নদীশাসন করা না হলে এই বাঁধ টিকিয়ে রাখা যাবে না।
উপকূলীয় এলাকায় গৃহীত অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতিও ভালো নয়। একের পর এক সময় বাড়ানো হচ্ছে। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব নিয়ে এর মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, অনুমিত হিসাব কমিটি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে। একেকটি প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেই প্রকল্প যদি জনগণের উপকারে না আসে, তাহলে এই ব্যয় করে লাভ কী? কেন কাজের ঠিকমতো তদারকি হবে না? হস্তান্তরের আগেই যদি বাঁধে ভাঙন শুরু হয়, তাহলে সেই বাঁধ কত দিন টিকবে? আমরা চাই, শরণখোলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোথায় কোথায় ত্রুটি হয়েছে, তা খুঁজে বের করা হোক এবং দ্রুত টেকসই উপায়ে বাঁধ মেরামত করা হোক।