ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা

34

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ১৯৫৭ সালের ৫ জুন ৪০তম অধিবেশনে ১০৭ নং কনভেনশনে আদিবাসী ও উপজাতীয় ভাষা বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে কিছু নীতিমালা তৈরি করে- এ কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ। কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২১-এ উল্লেখ রয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জাতীয় জনসমষ্টির অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সকল স্তরে শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর রয়েছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তাদের গান, ছড়া, কবিতা, উপকথা, রূপকথা, মিথোলজি- এগুলো বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে, অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আছে অন্তত ৪০টির। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৪০ ভাষার মধ্যে ৮টির নিজস্ব বর্ণমালা আছে। এগুলোর মধ্যে গারো, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও সাদ্রি- এই পাঁচ ভাষায় প্রাক- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই রচনা করেছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৫ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। এ থেকে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার দিকটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গণমাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে বিশেষভাবে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে আমাদের মাতৃভূমিতে।
বাংলাদেশে বসবাসরত প্রতিটি নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা থাকলেও তাদের মধ্যে অধিকাংশের ভাষারই নেই নিজস্ব বর্ণমালা। লিখিত রূপ না থাকায় তাদের হারিয়ে যাচ্ছে ভাষা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হচ্ছে কোন জনগোষ্ঠীর ভাষাই হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। এ দায়িত্ব শুধু বাঙালীর নয়, পৃথিবীর সব মানুষের। আমরা যেন শুধু আবেগতাড়িত হয়ে অমর একুশের কথা না বলি। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে যখন প্রত্যেক জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে। মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করতে পারবে, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এসব ভাষা রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই)। ইতোমধ্যে ভিন্ন ভাষার (নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা) মধ্য থেকে কয়েকটি ভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। সংরক্ষণের নানা বিষয়ে চলছে গবেষণা। আমরা এ কাজের সফলতা কামনা করি। ভাষার মাসে অমর একুশে পালন তখনই সত্যিকারের তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, যখন দেশের সকল নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণের কাজ আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে পারব।