কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতাকে ভালো চোখে দেখছে না সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের তৎপরতা ও বক্তব্যকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বলে মনে করছেন সরকার ও দলটির নীতিনির্ধারকরা।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশি কূটনীতিকদের বিভিন্ন তৎপরতা ও বক্তব্য মিডিয়ায় এসেছে৷ এগুলোকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিতসহ স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিভিন্ন মন্তব্য করছেন ও মতামত তুলে ধরছেন। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয় এবং এটা নিয়ে কূটনীতিকদের মন্তব্য বা বক্তব্য একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা নাক গলানো বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কথা বলাকে মোটেও তারা পছন্দ করছেন না। নির্বাচন একান্তই বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। বাংলাদেশের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। সেই সংবিধানের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে এবং রীতিনীতি মেনে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয়, এখানেও সেভাবে নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু হবে না, বা কারো কোনো মতামত গ্রহণ করা হবে না বলে তারা জানান।
সরকার ও আওয়ামী লীগের ওই নীতি নির্ধারকরা আরও জানান, কূটনীতিকরা যেমন নির্বাচন নিয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করছেন, পাশাপাশি দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলও তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। এসব রাজনৈতিক দলের কারণেও কূটনৈতিকরা উৎসাহিত হয়। এ ধরনের তৎপরতা অগণতান্ত্রিক পরিবেশকে উৎসাহিত করে। দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। কোনো তৎপরতায় অসংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ধারা যাতে উৎসাহিত না হয় সে ব্যাপারে সরকার সতর্ক আছে। নির্বাচন বিদেশিরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, কিন্তু একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের কোনো বিষয় সম্পর্কে কোনো অযাচিত মন্তব্য কাম্য নয় ।
গত ১১ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের কাছে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনীতিকদের তৎপরতা নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা যথেষ্ট ম্যাচিউরড। আশাকরি, তারা কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলবেন। আপনারা কূটনীতিকদের কাছে কেন ধরনা দেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে চেষ্টা করে কোনো কিছু হবে না। কূটনীতিরা মনিটর করুক, সেটা তারা করতেই পারেন। অতীতে তাদের তৎপরতা ওয়ান ইলেভেনকে উৎসাহিত করেছিল, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মর্যাদার জায়গায় চলে গেছে। আমাদের দেশের বিষয় নিয়ে কারো ছবক দেওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা হয়, সাংবিধানিক ধারা মেনেই এখানে নির্বাচন হবে। এনিয়ে কূটনীতিকদের চিন্তা করার দরকার নেই। আর যারা কূটনীতিদের কাছে ধরনা দেয়, তাদের বলব, তারা যেন এটা থেকে বিরত থাকেন। বাইরের কোনো দেশকে যেন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলাতে উৎসাহিত না করেন।