পুলিশী নির্যাতনে রায়হান হত্যাকান্ডের ২ বছর ॥ বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় পরিবার হতাশ

5

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে রায়হান আহমদ নামের যুবক হত্যার ২ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার ১১ অক্টোবর। বহুল আলোচিত এ হত্যাকান্ডের মামলায় ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। তবে ২ বছর পেরিয়ে গেলেও আসামিদের শাস্তি না হওয়ায় কিছুটা হতাশ রায়হানের পরিবার। আর ২ বছরে এখনো অধরা রয়ে গেছে আবদুল্লাহ আল নোমান নামের এক আসামি। হত্যাকাণ্ডের পর সে পালিয়ে ফ্রান্স চলে গেছে। ফ্রান্সে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছে নোমান নিজেই।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর দিবাগত রাতে নগরীর আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমেদকে ধরে নিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে নির্যাতন করেন তখনকার ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরিবারের দাবি, ওই রাতে ফোন করে রায়হানের পরিবারের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না দেওয়ায় আকবর ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য নির্মমভাবে রায়হানকে নির্যাতন করেন। এর ফলে ১১ অক্টোবর সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রায়হান। ঘটনার পরদিন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি আকবরসহ নির্যাতনকারী পুলিশদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় এসআই আকবরসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদনে ওই পাঁচ পুলিশ সদস্য ছাড়াও আসামী করা হয় হত্যাকান্ডের আলামত নষ্টে সাহায্যকারী সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমানকে। বর্তমানে নোমান পলাতক রয়েছে। মামলায় গ্রেফতার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন, এসআই আকবর হোসেন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস ও এসআই মো. হাসান উদ্দিন। বর্তমানে তারা কারান্তরিণ রয়েছেন। তদন্ত শেষে ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই। চার্জশিটে যুক্ত ময়নাতদন্ত রিপোর্টে চিকিৎসকরা বলেন, রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন ছিলো। চার্জশিটটি আমলে নিয়ে গত বছরের ১৮ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত। অভিযোগ গঠনের পর রায়হানের স্ত্রী, মা, পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ ৪৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণের একপর্যায়ে মামলার আসামি বরখাস্তকৃত কনস্টেবল হারুন অর রশিদ অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট।
ঘটনার ২ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার প্রক্রিয়াকে ‘বিলম্বিত’ উল্লেখ করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, প্রত্যাশা ছিলো- প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগেই আমার ছেলের খুনীদের শাস্তি হবে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় সেটি হলো না। আমরা হতাশ। মামলায় এত সাক্ষীর প্রয়োজন ছিলো না। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী নিয়েই মামলার রায় দ্রুত ঘোষণা করা যেতো। খুনীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমার রায়হানের আত্মা কিংবা আমরা শান্তি পাবো না।