কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্যাপক প্রত্যাশা থাকলেও ২০২২ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এবার সম্মানজনক পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের মানবাধিকারকর্মীরা।
বাজির ওয়েবসাইট ওডসচেকার ডট কম-এর তথ্য অনুসারে, নোবেলজয়ী হিসেবে বাজিকরদের পছন্দের তালিকায় ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তার পক্ষে বাজির দর ছিল ১৯-১০। প্রভাবশালী টাইম সাময়িকীর সম্ভাব্য তালিকাতেও ছিল তার নাম।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াতস্কি এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনভিত্তিক দুটি মানবাধিকার সংস্থা যথাক্রমে মেমোরিয়াল ও সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।
টুইটারে নোবেল পুরস্কার কমিটি বলেছে, নোবেলজয়ীরা যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার নথিবদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সম্মিলিতভাবে তারা শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য সুশীল সমাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদান করে নরওয়ের নোবেল কমিটি। বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন আহ্বান করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।
২০২২ সালের নোবেলজয়ীদের কথা তুলে ধরে কমিটি বলেছে, শান্তি পুরস্কার জয়ীরা নিজ নিজ দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা ক্ষমতার সমালোচনা ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন।
আলেস বিয়ালিয়াতস্কি
বেলারুশের কারাগারে থাকা বিয়ালিয়াতস্কি ১৯৮০-এর দশকে গোপন গণতান্ত্রপন্থী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। এই আন্দোলনের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে স্বাধীনতার দিকে বেলারুশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পর বেলারুশ স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু শিগগিরই দেশটি স্বৈরাচারী শাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। লুকাশেঙ্কোকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরশাসক’ হিসেবে বলা হয়ে থাকে।
১৯৯৬ সালে ভিয়াসনা হিউম্যান রাইটস সেন্টার গড়ে তুলেন বিয়ালিয়াতস্কি। ২০১১ সালে কর ফাঁকির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাড়ে চার বছরের কারাদ-ে দ-িত করা হয়। কিন্তু তিনি দাবি করে আসছে তিনি নির্দোষ এবং এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিয়ালিয়াতস্কিকে কারাগারে পাঠানোর পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাকে একজন বিবেকের বন্দি হিসেবে উল্লেখ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠলে ২০২০ সালের আগস্টে বেলারুশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে সমর্থন জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কঠোর হস্তে বিক্ষোভ দমন করেন লুকাশেঙ্কো। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে।
২০২১ সালের জুলাই মাসে আবারও গ্রেফতার হন বিয়ালিয়াতস্কি। কর ফাঁকির অভিযোগে কারাগারে অবস্থানকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ‘রাজনৈতিক বন্দি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
রুশ মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল
রুশ মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি এবং চেচনিয়া ও সিরিয়ায় রুশ সেনাদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে। ২০২১ সালে সরকারি চাপে তা আইনগতভাবে বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সংস্থাটি সোভিয়েত আমলে নিপীড়নের তথ্য সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিল।
ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ
তৃতীয় নোবেলজয়ী ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ ২০০৭ সালে গঠিত হয় দেশটিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ার বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেছেন, সংস্থাটি ইউক্রেনের সুশীল সমাজকে শক্তিশালী করার অবস্থান নিয়েছে এবং ইউক্রেনকে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনে পরিচালিত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর সংঘাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে।
রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেন, দোষীদের তাদের অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে কেন্দ্রটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।