স্টাফ রিপোর্টার :
আর কয়েকদিন পরই অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫দিন ব্যাপী সনাতন হিন্দু ধর্মালম্ববীদের শারদীয় দুর্গা পূজা শুরু হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে শিল্পীদের রঙিন তুলির আঁচড়ে দুর্গার প্রতিমাগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে।
মহানগরীর পাশাপাশি মফস্বল এলাকায়ও পূজা কমিটিগুলো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টায় কাজ করছেন দিনরাত। প্রতিমা শিল্পীদের কাজ আর পূজা কমিটির ব্যস্ততা ঘোষণা করছে আসন্ন এই দুর্গোৎসবের। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে নগরী শিববাড়ী পয়েন্টে সিলেট সিটি কপোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: ছয়েফ খান নিজের ছবিসম্ভলিত ব্যানার, ফেষ্টুন টাংগিয়ে জানান দিচ্ছেন শারদীয় দুগোৎসবের। তার মতো ক্ষমতাশীল অন্যান্য নেতাকর্মীরা একইভাবে বিভিন্ন পূজা মন্ডপ এলাকায় নিজেদের ছবিসম্ভলিত ব্যানার, ফেষ্টুন টাংগিয়েও জানান দিচ্ছেন দুর্গোৎসবের।
অপরদিকে কারিগররা ব্যস্ত প্রতিমা সাজাতে। আর পূজা কমিটিগুলো ব্যস্ত পূজার স্থান নির্ধারণসহ আনুষাঙ্গিক কাজে। অনেকেই প্রতিমা বানানোর জন্য দেশের নামকরা প্রতিমা নির্মাতাদের সাথে চুক্তি করে কাজ করছেন। প্রতিমা নির্মাতা শিল্পীরা বাঁশ খড়ের কাজ শেষ করে মাটির কাজ করছেন। কেউ বা মূর্তির উপর রং তুলির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ উৎসব। শরৎকালে এই পূজা হয় বলে একে শারদীয় দুর্গোৎসব বলা হয়। দুর্গোৎসবকে ঘিরে সিলেটের সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আর ক’দিন পরেই পূজার জন্য মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন করা হবে।
পঞ্জিকা মতে এবার দেবীর গজে (হাতিতে) আগমন আর নৌকায় গমন। ১ অক্টোবর সায়ংকালে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ দুর্গোৎৎসব। তবে সকল পূজামন্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার্চ্চনা সম্পন্ন করার কথা বলছেন পূজারীরা।
প্রতিমা শিল্পীরা জানান, ‘এখন তো দম ফেলবার ফুরসত নেই। শেষ সময়ে এসে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। রঙের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমার গায়ে পোশাক জড়ানোর কাজ চলছে।’ প্রতিমা নির্মাণ শিল্পীদের মতোই ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নির্মাণ শিল্পীরা। দুর্গাপূজায় ঢাক-ঢোল, মৃদঙ্গসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের যেমন বাড়তি চাহিদা থাকে, তেমনি মেরামতের প্রয়োজনেও অনেক বাদ্যযন্ত্রী ভিড় করছেন এসব যন্ত্রের দোকানে।
এবছর সিলেট বিভাগে পারিবারিক, বারোয়ারি ও সার্বজনীন পূজামন্ডপ (স্থায়ী ও অস্থায়ী) ২৭৩৩টি। পুরো বিভাগে গত বছর থেকে এবার ১৪৯টি পূজা বেশী হবে। আর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা মৌলভীবাজার জেলায় ১০০৬টি। গত বছর ছিল সিলেট বিভাগে পারিবারিক, বারোয়ারি ও সার্বজনীন পূজামন্ডপ (স্থায়ী ও অস্থায়ী) ২৫৮৪ টি।
এ বছর সিলেট মহানগর ও জেলায় ৬১১টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। যা গত বছর থেকে ৬টি পূজা বেশী। তার মধ্যে সার্বজনীন ৫৬১টি, পারিবারিক ৫০টি পূজোর আয়োজন হবে। মহানগরীতে ১৫৪টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ১৩৫টি ও পারিবারিক ১৯টি। জেলায় ৪৫৭টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ৪২৬টি ও পারিবারিক ৩১টি।
মহানগরীর ৬টি থানার মধ্যে কোতোয়ালী থানা এলাকায় ৪০টি এর মধ্যে সার্বজনীন ২৯টি ও পারিবারিক ১১টি, জালালাবাদ থানা এলাকায় মোট ২০টির মধ্যে সার্বজনীন ১৬টি ও পারিবারিক ৪টি। এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ৪১টির মধ্যে সার্বজনীন ৪০টি ও পারিবারিক ১টি। শাহপরান থানা এলাকায় ২২টি, এর মধ্যে সার্বজনীন ২১টি ও পারিবারিক ১টি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় সার্বজনীন ১৪টি। পারিবারিক পূজা নেই। মোগলাবাজার এলাকায় ১৭টির মধ্যে সার্বজনীন ১৫টি ও পারিবারিক ২টি।
আর জেলায় মোট ৪৫৭টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৫৭টি ও পারিবারিক ৩টি। বালাগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ২৮টি ও পারিবারিক ২টি। কানাইঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৩৫টি। জৈন্তাপুর উপজেলায় সার্বজনীন ২০টি ও পারিবারিক ২টি। বিশ্বনাথ উপজেলায় সার্বজনীন ২৪টি ও পারিবারিক ২টি। গোয়াইনঘাট উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৩৬টি। জকিগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৯৯টি। বিয়ানীবাজার উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৩৯টি, পারিবারিক ১৩টি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ২৫টি, পারিবারিক ১টি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩৭টি এবং ওসমানীনগর উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ২৬টি ও পারিবারিক ৮টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া, মৌলভীবাজার জেলায় ১০০৬টি পূজার আয়োজন করা হয়েছে। গতবছর থেকে এবার ৭৭টি পূজা কম। এর মধ্যে মৌলভীবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১০৯টি, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১৬৭টি, বড়লেখা উপজেলায় ১৫১টি, জুড়ি উপজেলায় ৭২টি, রাজনগর উপজেলায় ১২৯টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৬০টি ও কুলাউড়া উপজেলায় সর্বোচ্চ ২১৮টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে এবার ৪২৪টি পূজার আয়োজন করা হয়েছে। গতবছর থেকে ৪টি পূজা বেশী। গত বছর পূজা ছিল ৪২০টি। এবারের পূজার মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌরসভায় ২৬টি, সদর উপজেলায় ২৩টি, ছাতক পৌরসভায় ১২টি, ছাতক উপজেলায় ২২টি, জগন্নাথপুর পৌরসভায় ৬টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩৪টি, দিরাই পৌরসভায় ৭টি, দিরাই উপজেলায় ৬০টি, শান্তিগঞ্জ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) উপজেলায় ২২টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪৯টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৩০টি, শাল্লা উপজেলায় ৩৩টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৩০টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৯টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ১৮টি ও মধ্যনগর উপজেলায় ৩৩টি।
হবিগঞ্জ জেলায় এবার ৬৯২টি পূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর থেকে ৬টি পূজা বেশী। গত বছর পূজা ছিল ৬৮৬টি। এর মধ্যে হবিগঞ্জ পৌরসভায় ৩৭টি, সদর উপজেলায় ৪২টি, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় ৯টি, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ১২টি, লাখাই উপজেলায় ৬৭টি, আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায় ৮টি, আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৩২টি, বানিয়াচং উপজেলায় ১২৬টি, চুনারুঘাট পৌরসভায় ১০টি, চুনারুঘাট উপজেলায় ৭৯টি, মাধবপুর পৌরসভায় ১৩টি, মাধবপুর উপজেলায় ১১১টি, বাহুবল উপজেলায় ৫২টি, নবীগঞ্জ পৌরসভায় ৭টি ও নবীগঞ্জ উপজেলায় ৮৭টি পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা শারদীয় উৎসব সুষ্ঠু সুন্দর ও সফল করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া, সকল পূজা মন্ডপে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য নিজস্ব জেনারেটর ও নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ভলান্টিয়ার রাখার কথা বলেছেন। তিনি আরো জানান, জেলায় পূজার সার্বিক বিষয় মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় মনিটরিং সেল রাখা হবে।
মহানগরীর পূজামন্ডপগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় হলো মাছুদিঘিরপারের ত্রিণয়নী, দাঁড়িয়াপাড়ার চৈতালী, সনাতন যুব ফোরাম, লামাবাজার তিন মন্দির, রাজবাড়ী, কাজলশাহ, রামকৃষ্ণ মিশন, বলরাম জিউড় আখড়া, গোপালটিলা, যতরপুর, চালিবন্দর, মাছিমপুর, তোপখানা, গোটাটিকর শিববাড়ি।
দেবী দুর্গার যে মূর্তি সচরাচর দেখা যায়- সেটি সপরিবারে দেবী দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যে দেবী দুর্গা সিংহ বাহিনী ও মহিষাসুর মর্দিনী। দেবীর ডান দিকে উপরে লক্ষ্মী ও নীচে গণেশ। বাঁ দিকে উপরে সরস্বতী ও নীচে কার্তিক। সেই সাথে রয়েছে তাদের বাহন পেঁচা, ইঁদুর, হংস ও ময়ূর। আর দেবীর কাঠামোর উপরে শিবের মূর্তি স্থাপন করা হয়।