৯৯ আসনে বিএনপির ভোট নয় লাখ

58

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রবিবারের ভোটে দেশের এক-তৃতীয়াংশ আসনে বিস্ময়করভাবে কম ভোট পেয়েছে বিএনপি। সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া ৯৯টিতে ধানের শীষের পক্ষে রায় দিয়েছেন নয় লাখ ১০ হাজার ২৩০ জন। এই আসনগুলোতে বিজয়ী আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের শরিকদের ভোট দুই কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৪টি।
এই আসনগুলোর মধ্যে একটি অংশ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যেগুলোতে নৌকা মানেই বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জয় হয়ে আসছে। তবে কিছু আসনে বিএনপি খুবই শক্তিশালী ছিল। কিছু আসনে দুই পক্ষের শক্তিই ছিল সমানে সমান। কখনো এক পক্ষ, কখনো জিতেছে আরেক পক্ষ।
এই ৯৯টি আসনের কোনোটিতে বিএনপি ২০ হাজার ভোট পায়নি। ১০ হাজারের ওপর ও ২০ হাজারের নিচে ভোট ৪২টি আসনে। ৩৪টি আসনে ভোট পড়েছে পাঁচ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে। ২০টি আসনে ভোট পড়েছে এক থেকে পাঁচ হাজার। এর মধ্যে দুটি আসনে ভোট আবার দুই হাজারের কম। এক হাজারের কম পড়েছে তিনটি আসনে। দুই শয়ের কম পড়েছে আবার দুটিতে আর এক শয়ের কম একটিতে।
বিএনপির এই ভোট আবার তাদের একক নয়, জোটের দ্বিতীয় প্রধান দল জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য শরিকদের সমর্থনও যোগ হয়েছে এসব আসনে। আর ধানের শীষের সব প্রার্থীও নিজ দলের নন।
বিএনপি এই ভোটের ফলকে মানতে পারছে না কোনোমতে। তারা বলছে, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ব্যবধান হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগের রাতে সিল মেরে এবং ভোটের দিন কেন্দ্রে বিরোধীপক্ষকে যেতে বাধার কারণে এই ফলাফল হয়েছে বলে দাবি তাদের।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভোটকে পুরোপুরি সুষ্ঠু আখ্যা দিয়ে বলেছেন, জামায়াত ও জঙ্গি তোষণ, ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি-লুটপাট, আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার ফল পেয়েছে বিএনপি। আর সরকারের পক্ষে রায় এসেছে উন্নয়নের।
১০ হাজারের ওপর ও ২০ হাজারের নিচে যারা :
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের আব্দুল হাকিম ১৫ হাজার ৬৩৮, লালমনিরহাট-১ আসনে বিএনপির রাজিব প্রধানের ভোট ১২ হাজার ১৫৭।
বগুড়া-১ আসনে কাজী রফিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৬১৩, নাটোর-১ আসনে কামরুন্নাহার শিরিন ১৫ হাজার ৩৩৮, নাটোর-২ আসনে সাবিনা ইয়াসমীন ১৩ হাজার ১৯৭ ভোট পেয়েছেন।
রাজশাহী-৪ আসনে আবু হেনা ১৪ হাজার ১৫৭, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে রুমানা মাহমুদ ১৩ হাজার ৭৫৮, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে এম এ মুহিত পেয়েছেন ১৪ হাজার ৬৯৭ ভোট।
পাবনা-১ আসনে ধানের শীষ নিয়ে গণফোরামের আবু সাইয়িদ পেয়েছেন ১৬ হাজার ৪ ভোট।
মেহেরপুর-১ আসনে মাসুদ অরুণ ১৪ হাজার ১৯২, কুষ্টিয়া-৩ আসনে জাকির হোসেন সরকার ১৪ হাজার ৩৮১, যশোর-২ আসনে ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসেন ১৩ হাজার ৯৪০, মাগুরা-১ আসনে মনোয়ার হোসেন খান ১৬ হাজার ৬০৬, বাগেরহাট-১ আসনে শেখ মাসুদ রানা ১১ হাজার ৪৮৫, বাগেরহাট-৩ আসনে ধানের শীষে জামায়াতের আবদুল ওদুদ ১৩ হাজার ৪৭৫ ভোট পেয়েছেন।
খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলাল ১৪ হাজার ১৮৭, খুলনা-৬ আসনে ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের আবুল কালাম আজাদ ১৯ হাজার ২৫৭ ভোট পেয়েছেন।
বরগুনা-১ আসনে মতিয়ার রহমান তালুকদার ১৫ হাজার ৩৪৪, পটুয়াখালী-১ আসনে আলতাফ হোসেন চৌধুরী ১০ হাজার ৩৬৯, ভোলা-২ আসনে হাফিজ ইব্রাহিম ১৪ হাজার ২১৪ ভোট পেয়েছেন।
বরিশাল-২ আসনে সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ১১ হাজার ১৩৭, বরিশাল-৬ আসনে আবুল হোসেন ১৩ হাজার ৬৫৮ ভোট পেয়েছেন।
শেরপুর-৩ আসনে মাহামুদুল হক রুবেল ১২ হাজার ৪৯১, নেত্রকোনা-৫ আসনে আবু তাহের তালুকদার ১৫ হাজার ৬৩৮ ভোট পেয়েছেন।
টাঙ্গাইল-১ আসনে সরকার শহিদ ১৬ হাজার ৪০৬, টাঙ্গাইল-২ আসনে সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু ১১ হাজার ১৪৯ ভোট পেয়েছেন।
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে আব্দুল হাই ১২ হাজার ৭৩৭, মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে মিজানুর রহমান সিনহা ১৪ হাজার ১৮৭, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১৬ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়েছেন।
গাজীপুর-৪ আসনে বিএনপির শাহ রিয়াজুল হান্নান ১৮ হাজার ৫৮২, নরসিংদী-৪ আসনে সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ১৬ হাজার ৫০৫, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনিরুজ্জামান মনির ১৬ হাজার ৪৩৪, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৮৫ ভোট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে কাজী নাজমুল হোসেন তাপস ১৭ হাজার ১১, কুমিল্লা-৩ আসনে মুজিবুর রহমান ১২ হাজার ৩৫৮ ভোট, কুমিল্লা-৫ আসনে মোহাম্মদ ইউনুস ১২ হাজার ১১৩, কুমিল্লা-৭ আসনে ধানের শীষ নিয়ে এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ ১৫ হাজার ৭৪৭, কুমিল্লা-৯ আসনে এম আনোয়ারুল আজিম পেয়েছেন ১১ হাজার ৩০৯ ভোট।
চাঁদপুর-২ আসনে জালাল উদ্দিন ১০ হাজার ২৩৯, নোয়াখালী-৫ আসনে মওদুদ আহমদ ১০ হাজার ৯৭০, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ১৪ হাজার ৪৯২ ভোট এবং কুষ্টিয়া-৪ আসনে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী পেয়েছেন ১২ হাজার ৫০৭ ভোট।
পাঁচ থেকে ১০ হাজার ভোট যাদের :
নাটোর-৩ আসনে দাউদার মাহমুদ আট হাজার ৮৪১, পাবনা-২ আসনে এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব পাঁচ হাজার ৩৮৩ ভোট, মেহেরপুর-২ আসনে জাবেদ মাসুদ মিল্টন পেয়েছেন সাত হাজার ৭৯২ ভোট।
কুষ্টিয়া-১ আসনে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা ছয় হাজার ১০৩, ঝিনাইদহ-২ আসনে ফখরুল ইসলাম নয় হাজার ২৯৩ ভোট, ঝিনাইদহ-৪ আসনে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ নয় হাজার ৫০৬, যশোর-৬ আসনে আবুল হোসেন আজাদ পাঁচ হাজার ৬৫৩ ভোট পেয়েছেন।
নড়াইল-১ আসনে জাহাঙ্গীর আলম আট হাজার ৯১৯, নড়াইল-২ আসনে ধানের শীষে এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ সাত হাজার ৮৮৩, ঝিনাইদহ-১ আসনে আসাদুজ্জামান পেয়েছেন ছয় হাজার ৬৬৮ ভোট।
বরগুনা-২ আসনে খন্দকার মাহবুব হোসেন নয় হাজার ৫১৮, ভোলা-১ আসনে গোলাম নবী আলমগীর সাত হাজার ২৯৯, পটুয়াখালী-২ আসনে সালমা আলম পাঁচ হাজার ৬৬০, পটুয়াখালী-৩ আসনে গোলাম মাওলা রনি ছয় হাজার ৪৫৯, পটুয়াখালী-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন পেয়েছেন ছয় হাজার ৯৭ ভোট।
বরিশাল-৪ আসনে ধানের শীষে নাগরিক ঐক্যের নূরুর রহমান জাহাঙ্গীর পেয়েছেন নয় হাজার ২৮২ ভোট।
ঝালকাঠি-১ আসনে শাহজাহান ওমর ছয় হাজার ১৫১, ঝালকাঠি-২ আসনে জীবা আমিন খান পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৮২ ভোট।
পিরোজপুর-১ আসনে ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের শামীম সাঈদীর পক্ষে আট হাজার ৩০৮, পিরোজপুর-২ আসনে ধানের শীষে লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ছয় হাজার ৩২৬ এবং পিরোজপুর-৩ আসনে বিএনপির রুহুল আমীন দুলাল পেয়েছেন সাত হাজার ৬৯৮ ভোট।
জামালপুর-২ আসনে সুলতান মাহমুদ বাবু ১৬ হাজার ৭২১, শেরপুর-২ আসনে ফাহিম চৌধুরী সাত হাজার ৬৫২, নেত্রকোনা-৩ আসনে রফিকুল ইসলাম হিলালী পেয়েছেন সাত হাজার ২২ ভোট।
টাঙ্গাইল-৩ আসনে লুৎফর রহমান খান আজাদের ভোট আট হাজার ৫৭০টি। নরসিংদী-২ আসনে আব্দুল মঈন খান ভোট পেয়েছেন সাত হাজার ৩৬০।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নজরুল ইসলাম আজাদ পাঁচ হাজার ১২, রাজবাড়ী-২ আসনে নাসিরুল হক সাবু পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৭৫ ভোট।
কুমিল্লা-৪ আসনে ধানের শীষে জেএসডির আব্দুল মালেক রতন সাত হাজার ৯৫৮, কুমিল্লা-১০ আসনে মনিরুল হক চৌধুরী পাঁচ হাজার ২৯১, চাঁদপুর-১ আসনে মোশারফ হোসেন সাত হাজার ৭৫৯, ফেনী-২ আসনে জয়নাল আবদিন পাঁচ হাজার ৭৮৪ ভোট পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৭ আসনে ধানের শীষ নিয়ে এলডিপির নুরুল আলম ছয় হাজার ৬৫, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সরওয়ার জামাল নিজাম পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৫৩ ভোট।
এক থেকে পাঁচ হাজার ভোট যাদের :
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে কনকচাঁপা এক হাজার ১১৮ এবং বরিশাল-১ আসনে জহিরউদ্দিন স্বপন পেয়েছেন এক হাজার ৩০৫ ভোট।
যশোর-১ আসনে মফিকুল হাসান তৃপ্তির পক্ষে চার হাজার ৯৮১টি, বাগেরহাট-২ আসনে এম এ সালামের পক্ষে পড়েছে চার হাজার ৫৯৭ ভোট।
ভোলা-৩ আসনে বিএনপির হাফিজ উদ্দিন চার হাজার ১৫১, ভোলা-৪ আসনে নাজিম উদ্দিন আলম চার হাজার ৯৯৬ ভোট পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ-১০ আসনে এলডিপির মাহবুব মোর্শেদ তিন হাজার ১৭৫, জামালপুর-৩ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল পেয়েছেন চার হাজার ৬৫৬ ভোট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে আব্দুল খালেক এক হাজার ৩২৯, কুমিল্লা-১১ আসনে ধানের শীষ নিয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এক হাজার ১৩৩, নোয়াখালী-৬ আসনে ফজলুল আজিম পেয়েছেন ৪ হাজার ৭১৫ ভোট।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে ফজলুর রহমান চার হাজার ৯৩৮, মাদারীপুর-২ আসনে মিল্টন বৈদ্য দুই হাজার ৫৮৮, মাদারীপুর-৩ আসনে আনিসুর রহমান তালুকদার তিন হাজার ৩০০, শরীয়তপুর-১ আসনে সর্দার নাছির উদ্দিন এক হাজার ৫৪, শরীয়তপুর-২ আসনে সফিকুর রহমান কিরণ দুই হাজার ১১৩, শরীয়তপুর-৩ আসনে মিয়া নুরুদ্দিন অপু পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৫ ভোট।
চট্টগ্রাম-১ আসনের নুরুল আমিন তিন হাজার ৯৯১, চট্টগ্রাম-৩ আসনের মোস্তফা কামাল পাশা তিন হাজার ১২২ এবং চট্টগ্রাম-৬ আসনের জসিম উদ্দিন সিকদার দুই হাজার ২৪৪ ভোট পেয়েছেন।
এক হাজারের নিচে যারা
গোপালগঞ্জ-১ আসনে এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর ভোট পেয়েছেন সবে ৫৭টি। তিনিই ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকে বিএনপিতে সবচেয়ে তলানিতে আছেন। গোপালগঞ্জ-২ আসনে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ২৮৬ এবং গোপালগঞ্জ-৩ আসনে এস এম জিলানী পেয়েছেন ১২৩ ভোট।