কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ বছর আসন্ন শীতের মাসগুলো ইউরোপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে। প্রাকৃতিক গ্যাসসহ সার্বিকভাবে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের বিল মেটানো ও ঘর গরম রাখা সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠছে। মূলত রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কার্যত প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘাটতি মেটাতে হিমসিম খাচ্ছে ইউরোপের অনেক দেশ।
জানা গেছে, ইউক্রেন সংকটের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ মেটাতো রাশিয়া। সরবরাহে বিঘ্নের জন্য মস্কো নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করলেও ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে জ্বালানিকে হাতিয়ার করার অভিযোগ করছে।
জার্মানির সরকার সংকটের শুরু থেকেই দ্রুত গতিতে গ্যাসের বিকল্প উৎসের সন্ধান শুরু করে। ইউরোপের কিছু দেশ ছাড়াও কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ থেকে এলএনজি বা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছে বার্লিন। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও সেই লক্ষ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে সে গ্যাস গ্রহণ করার জন্য এলএনজি টার্মিনাল এখনো প্রস্তুত হয়নি। বর্তমানে চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ গ্যাস জমা হওয়ার ফলে জার্মানি কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছে।
জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক সোমবার জানিয়েছেন, দেশের উত্তর পশ্চিমে লুবমিনে একটি টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। ডিসেম্বর মাসেই সেখানে জাহাজে করে এলএনজি বোঝাই জাহাজ নোঙর করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। আরও কয়েকটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে।
হাবেক বলেন, সবকিছু ঠিকমতো চললে, জ্বালানি সাশ্রয়ের মাত্রা ভালো থাকলে ও আবহাওয়ার ক্ষেত্রে ভাগ্য প্রসন্ন হলে শীতের মাসগুলোতে জার্মানিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
হাবেক আরও বলেন, সরকার প্রয়োজনে জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতেও প্রস্তুত।
জ্বালানি সংকটের জের ধরে ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতাও বাড়ছে। এর আওতায় আগামী ১০ই অক্টোবর থেকে ফ্রান্সের একটি সংস্থা জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে বলে জানিয়েছে। তবে পরমাণু চুল্লিগুলোর চলমান সমস্যার কারণে ফ্রান্সেও শীতকালে বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তবে দেশটির সাধারণ মানুষের জন্য গ্যাসের অভাব হবে না বলে আশ্বাস দিচ্ছে সিআরই নামের জ্বালানি কোম্পানি।
স্পেনের শিল্পমন্ত্রী রাইয়েস মারোতো জানিয়েছেন, যেসব শিল্পক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়, ঘাটতি দেখা দিলে শীতকালে সেগুলো বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সব কোম্পানিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ফিনল্যান্ডের গ্রিড কোম্পানি ফিনগ্রিড বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা জানিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়েছে। পর্তুগলের এক বিদ্যুৎ কোম্পানি বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে না পেরে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে।
তবে পর্তুগালের সরকারও কোনো রাখঢাক না করে জানিয়েছে, শীতকালে কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দেশ। সেখানের পরিবেশমন্ত্রী দুয়ার্তে কর্দেইরো অবশ্য ইউরোপীয় স্তরে গ্যাস কেনার সার্বিক উদ্যোগ সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেন।