অক্টোবরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ফের শুরু হতে পারে

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে আবারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা প্রকাশ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে নতুন করে চলমান সহিংসতার ফলে দেশটির কোন নাগরিককে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ থাকছে না। যেকোন পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ ঠেকানো হবে। বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের এনজিও সংস্থা হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজোয়ান হায়াত, হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডাঃ ওবাইদুর রহমান।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজী বলে একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করেও সময়ক্ষেপণ করেছে মিয়ানমার নেতৃবৃন্দ। প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা ঢাকা থেকে নেপিডোতে পাঠানো হলেও মিয়ানমার ঢাকাকে জানিয়েছে তারা ৩৫ হাজার উদ্বাস্তুকে ফিরিয়ে নেবে। ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গার স্রোত শুরু হয়।
২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। যদি এই পাঁচ বছরের মধ্যে মিয়ানমার ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে সে দেশে বসবাসকারী বলে চিহ্নিত করতে পারলেও আরও ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করে ঢাকাকে তালিকা পাঠাতে কত বছর লাগবে? এই পাঁচ বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা মহিলারা আরও প্রসব করেছে অন্তত দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সন্তান। এতে করে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ।
৫ বছরে মিয়ানমার ৩৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা প্রেরণ করলে, তাহলে ১৪ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা পাঠাতে মিয়ানমারের সময় লাগতে পারে আরও ৪০ বছর। আরও ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হবে রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রাপ্তির জন্য। তারপর শুরু হবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। দৈনিক ১৫০ জন করে রোহিঙ্গা ফেরত নিলে মাসে যাবে ১৫ হাজার জন। এক বছরে ফিরে যাবে ১ লাখ ৮০ হাজার। ১০ বছরে ফিরবে ১৮ লাখ।
এই দশ বছরে আরও অন্তত ৪-৫ লাখ রোহিঙ্গা সন্তান জন্ম নেবে আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, মিয়ানমার একগুঁয়ে কাজ করে থাকে প্রতিনিয়ত। প্রত্যাবাসন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ একতরফাভাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে থাকে। যেমন ১৯৯২ সালে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখনও রয়েছে বাংলাদেশে। ২০১৭ সালের আগেও মিয়ানমার ঢাকাকে আশ্বাস দিয়েছিল ২৪২০ জন রোহিঙ্গাকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে ফেরত নেবে। এরপর ঠেলে দেয়া হলো আরও ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে। বারবার প্রত্যাবাসনের আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছে মিয়ানমার।
ভেতরে ভেতরে তারা শক্ত অবস্থানেও রয়েছে সীমান্তে। প্রতিদিন গোলাগুলি হচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। যা বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ সীমান্ত চুক্তি আইন ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন বহির্ভূত। আকাশপথ অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতর মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও বিমান ঘুরে যাওয়াটা উভয় সীমান্ত আইনের লঙ্ঘন। এ ছাড়াও ৪টি মর্টার শেল বাংলাদেশ অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করাও চাট্টিখানি কথা নয়।
বাংলাদেশ এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানালে মিয়ানমার শুধু ভুল স্বীকার ও ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে বলে পার পেয়ে যাচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় এখানে বাংলাদেশের নমনীয়তা না থাকলেও মিয়ানমার বারবার সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে চলেছে।
তুমব্রু সীমান্তে একটি পাহাড়ে (ওয়ালিদং) আরাকান আর্মি নামে বিদ্রোহীদের আস্তানা আছে মর্মে দেশটির সেনাবাহিনী নিশ্চিত হলেও ওই পাহাড়ে মাসখানেক ধরে ভারী অস্ত্রের গুলি ছোড়া হচ্ছে কেন? কপ্টার ও যুদ্ধ বিমানে করে অসংখ্য বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলেন, ওই ওয়ালিদং পাহাড়ে একে ৪৭ অস্ত্রের গুলি-মর্টারশেল ও একাধিক ভারী বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে একদিনেই পাহাড়টির মাটি তুলার মতো করে উড়ে যাবার কথা।
সেখানে মাসখানেক ধরে কেন অসংখ্য বোমা ও ভারী অস্ত্রের গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে? মিয়ানমার কী রোহিঙ্গা ফেরত না নিয়ে বাংলাদেশকে উসকানি দিচ্ছে? না কি তাদের শক্তি সঞ্চার কতটুকু তা জানান দিচ্ছে বলে প্রশ্ন তুলে বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশ ধৈর্য ধারণ করে সমস্যা তথা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কূটনৈতিক আলোচনায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে টেকসই সম্পর্কের জন্য দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বিশ্লেষকরা আরও বলেন, দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক কেবল সরকারের সঙ্গে সরকারের থাকলে হবে না। এটা করতে হবে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সকল ক্ষেত্রে। সম্পর্ক করতে হবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে।