শাদমান শাবাব শাবি থেকে :
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার চরনারচর গ্রামের বাসিন্দা মতিলাল বিশ্বাস। ভয়াবহ বন্যায় তিনি হারিয়েছেন তার বসতঘর। এতোদিন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বন্যাদুর্গত এলাকায় বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তেমন কোনো সহায়তা পাননি বলে জানান মতিলাল। অবশেষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নোথান’ এর বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে ঘর সংস্কারের টিন ও ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন তিনি।
গত শনিবার(৩ সেপ্টেম্বর) মতিলাল বিশ্বাসের মতো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই ও শাল্লা উপজেলার মোট ২১টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহায়তা দিয়েছে স্বপ্নোত্থানের স্বেচ্ছাসেবীরা।
স্বপ্নোত্থানের এই সহায়তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত মতিলাল। তিনি বলেন, “এতোদিন অনেক ত্রাণ দেওয়া হইছে, কিন্তু আমরা চরনারচর গ্রামের বাসিন্দারা তেমন কিছু পাই নাই। এবার এই টিন দিয়া ঘরবাড়ি মেরামত করমু।”
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নোত্থান’ এর পুনর্বাসন সহায়তা পাওয়াদের আরেকজন শাল্লা উপজেলার নতুনহাটি গ্রামের রাজিয়া বেগম। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বন্যায় আমাদের অনেক গৃহপালিত পশু-পাখি মারা গেছে। সহায়তার এই জাল, মুরগী আমাদের জীবিকায় সাহায্য করবে৷
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচরের শেরপুর ও চরনারচর গ্রামের ৫টি এবং শাল্লা উপজেলার আঁটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের নতুনহাটি গ্রামের ১৬টি বানভাসি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন সামগ্রী বিতরণ করেছে স্বপ্নোত্থানের স্বেচ্ছাসেবীরা। এসময় পুনর্বাসন সামগ্রী হিসেবে টিন, জাল, পালনের জন্য মুরগী, গরুর খাবার ও চাল বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি ওই পরিবারগুলোর শিশুদের পড়াশোনার জন্য খাতা ও কলম প্রদান করা হয়। এছাড়া কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মুসলিম পরিবারগুলোকে কোরআন শরীফ এবং হিন্দু পরিবারগুলোকে গীতা প্রদান করা হয়েছে।
সহায়তা প্রদান বিষয়ে স্বপ্নোত্থানের সাধারণ সম্পাদক মাইবম দর্পণ সিংহ বলেন, স্বপ্নোত্থান বন্যার শুরু থেকেই সাধ্য অনুযায়ী বানভাসিদের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। বন্যায় সিলেটসহ সুনামগঞ্জের অধিকাংশ এলাকার মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের দুর্দশা লাঘবে আমাদের এই পুনর্বাসন কার্যক্রম। অর্থ সাহায্য অব্যাহত রেখে আমাদের কার্যক্রম সচল রাখার জন্য আপনাদের সকলের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
উল্লেখ্য, পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ১ আগষ্ট সংগঠনটির পক্ষ থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের পাইকরাজ গ্রামের ৫টি বানভাসি পরিবারের মাঝে পুনর্বাসন সামগ্রী হিসেবে ১০ বান্ডিল(বান) টিন এবং শিক্ষাসামগ্রী হিসেবে ওই পরিবারগুলোর শিশুদের মধ্যে বই, খাতা, কলম ও কোরআন শরীফ প্রদান করা হয়। এর আগে বন্যাকালীন সময়ে ৮ ধাপে সর্বমোট ১৩৩৫টি পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয় স্বপ্নোত্থান।