কাজিরবাজার ডেস্ক :
শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে প্রণীত নতুন সড়ক পরিবহন আইন এখন থেকে কার্যকর জানিয়ে সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রবিবার থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকর শুরু হয়েছে। আইন অমান্যে প্রথমেই বড় কোন শাস্তি নয়, বরং ধাপে ধাপে এর মাত্রা বাড়ানো হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পেছনে ফেরার আর কোন সুযোগ নেই। গর্জন আর তরঙ্গের অপর নামই হলো চ্যালেঞ্জ। এতে যত ধরনের বাধাই আসুক না কেন, আমি এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাব।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি প্রকাশে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবিরোধী কোন চুক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে কখনও হয়নি, হবেও না। ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি করা চুক্তির বিস্তারিত জনসমক্ষে প্রকাশের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিএনপির চিঠি দেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জোর গলায় বলতে পারি, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কোন চুক্তি শেখ হাসিনা করবেন না। আর চুক্তি যা হয়েছে, এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। চুক্তির মধ্যে কোন গোপনীয়তা নেই। নতুন করে এটার আবার কী ব্যাখ্যা দেয়া হবে? চুক্তি তো চুক্তি, চুক্তি কি গোপন করে রাখা যায়?
রবিবার রাজধানীর বসুন্ধরায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) স্থায়ী ক্যাম্পাস অডিটরিয়ামে সড়ক নিরাপত্তা ও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বিষয়ক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনায় ওবায়দুল কাদের বলেন, রবিবার থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকর শুরু হয়েছে। নতুন সড়ক আইনে বেশি জরিমানা মানে বেশি অর্থ নেয়া নয়। বেশি জরিমানা দিলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শাস্তির ভয় দেখাই যাতে গাড়ি চালকরা আইন ভঙ্গে নিরুৎসাহিত হয়। গুরুতর আইন করা হয়েছে। আজ থেকে আইন মেনে চলার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে আইন সংশোধন করা হবে। আস্তে আস্তে আইন প্রয়োগ করা হবে। ইচ্ছে করলে জনগণের চাহিদার বাইরে যেতে পারি না। যারা রাস্তায় অপরাধ বা অপকর্ম করবে না, তাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আর এখানে গায়ে পড়ে কাউকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এখানে শাস্তির বিষয়ে প্রথমবারেই বড় জরিমানা হয়ে যাবে, তা নয়। এমনও হতে পারে অপরাধ কম হলে জরিমানাটা এক হাজার টাকা হবে। আবার এটা বার বার করলে সেখানে জরিমানা বাড়বে। তিনি বলেন, আইনটি প্রথমেই হুবহু বাস্তবায়ন হবে, বিষয়টা এমন নয়, পুলিশকে আস্তে আস্তে করতে বলা হয়েছে। ২৪ তারিখে টাক্সফোর্সের মিটিংয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। যাতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়, পুলিশ যেন এ্যাগ্রেসিভ না হয়।
সেতুমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে কিছু গাড়ি আছে, তারা সিটিং (সার্ভিস) লিখে রাখে। আসলে তারা সিটিং নয়, চিটিং সার্ভিস। নতুন আইন বাস্তবায়ন করা হবে। কিছুদিন শিথিল করেছিলাম সচেতনতা বাড়াতে। দু’সপ্তাহ সময় দিয়েছিলাম, সেটা শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, রোড সেক্টর খুব চ্যালেঞ্জিং। আমরা সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ডায়ন্যামিক নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বললেন, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হবে। আমাদের দেশের সেই পদ্মা সেতু এখন দাঁড়িয়ে গেছে। দৃশ্যমান হয়েছে। বর্তমানে পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে ৭৪ ভাগ। ২০২১ সালে পদ্মা সেতুতে ড্রবল ডেকার সেতুর (ডুয়েল) লাইন চালু করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের কমতি নেই। কিন্তু, আমাদের সঙ্কট হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা। এই শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে যাচ্ছি। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে স্থানীয় জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। তখন তারা সড়কে রোড স্পীড ব্রেকারের দাবি জানায়। নসিমন-করিমন ২২টি রুটে এগুলো নিষিদ্ধ করেছি। তিনি বলেন, আমরা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি। যে দেশ পাকিস্তানকে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে, সেই বাংলাদেশ এখন সব সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এখন পাকিস্তানের টিভির টকশোতে আলোচনা হয়, ‘মুঝে বাংলাদেশ বানাদো।’ বিধ্বংসী বোমা ছাড়া আর সকল ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে আমরা এগিয়ে আছি।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি প্রকাশে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি মহাসচিবকে জিজ্ঞেস করব, তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা বিদেশের কোন চুক্তি সংসদে উত্থাপন করেছেন অথবা সংসদে অনুমোদন নিয়েছেন? পার্লামেন্ট কী বিএনপি আমলে কোন চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে? তাদের তো অভিযোগই হচ্ছেÑআওয়ামী লীগ মানে দেশ বিক্রি, গোলামির চুক্তি, বাংলাদেশ ভারতের হয়ে যাবে। এগুলো তারা বলেই আসছে।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের বৈঠক নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। বিএনপি আর জামায়াতে ইসলাম উপরে যাই বলুক, তলে তলে এদের গলায় গলায় খাতির। এরা একই বৃন্তে দুটি ফুল। একটিকে ছাড়া আরেকটি চলবে না। তারা জমজ ভাইয়ের মতোই আছে, কাজেই তাদের বিচ্ছিন্ন ভাবার কোন কারণ নেই। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দেশীয় পেঁয়াজ যখন বাজারে আসবে তখন আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এআইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল হোসেন ও ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. চার্লস সি ভিনালুয়েভা।