সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে ইনজেকশন দিতে গিয়ে বাম পায়ে সুই বিদ্ধ করে জখম করার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০) আগষ্ট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আনিসুর রহমানের কাছে অভিযোগটি দায়ের করেছেন, সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের তাহির আলীর পুত্র মোঃ বাচ্চু মিয়া। একই ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় বুধবার (৩১ আগষ্ট) অপর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অভিযোগে প্রকাশ, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায় বাচ্চু মিয়া তার এক বছরের শিশুকন্যা তাসনিহা কে গত ২৭ আগষ্ট শনিবার সকাল ৭টায় জেলা সদর হাসপাতালের ৬ তালায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। ভর্তির পর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এনামুল হক খান শিশুটিকে চিকিৎসা দেন। কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত একজন নার্স এসে শিশুটির বাম পায়ে ইনজেকশন পুশিং করেন। সকাল ১১ টায় তারা লক্ষ্য করেন শিশুটির পা হঠাৎ করে ফোলে উঠেছে। তখন বিষয়টি ডাঃ এনামুল হক খানকে জানিয়ে তারা আবারও শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে যান। ডাঃ এনামুল হক খান শিশুটির পিতামাতাকে এই বলে সান্তনা দেন যে, পা ফোলে গেছে এটা কোন সমস্যা নয়,ঠিক হয়ে যাবে। পরদিন ২৮ আগষ্ট রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ডাঃ এনামুল হক খান হাসপাতালে এসেই প্রথমে শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করে দেন। কিন্তু শিশুটির পায়ে ইঞ্জেকশনের সুইচ গেথে রয়েছে এমন সন্দেহ হওয়ায় তারা হাসপাতালের অন্যান্য নার্স ও স্টাফদের কথায় হ্যাল্থ কেয়ার প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে ডাঃ বিশ্বজিৎ গোলদারকে দেখান। ডাঃ বিশ্বজিৎ গোলদার শিশুটিকে দেখে তাদেরকে জানান, শিশুটির পায়ে ইঞ্জেকশনের সুইচ বিদ্ধ রয়েছে তাই সিলেটে যেতেই হবে বলে তাদেরকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলেন। সুই বিদ্ধ করার কারণে শিশুটির পায়ে অতিরিক্ত বেদনাদায়ক জখমের দরুন শিশুটির পিতামাতা অসহায় হয়ে আবার ২৯ আগষ্ট সোমবার সকাল ৮ টার সময় শিশুটিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় পুনরায় ডাঃ মোহাম্মদ এনামুল হক খান একই ওয়ার্ডে এসে শিশুটিকে দেখার নামে তাৎক্ষনিকভাবে সিলেটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আবারও ছাড়পত্র ইস্যু করার চেষ্টা করেন। তখন প্রথমবার ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় দানকালে আপনি বললেন কোন সমস্যাই না এখন কেন সিলেটে যেতে বলছেন,আমাদের সন্তানের আসলে কি সমস্যা হয়েছে ? বলে ডাক্তার এনামুল হক খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার এখন কিছুই করার নাই। ডাক্তার এনামুল হক খানের এই কথায় শিশুটির পায়ে ইঞ্জেকশন পুশিং করতে গিয়ে কর্তব্যরত নার্স কর্তৃক ইঞ্জেকশনের সুইচ বিদ্ধ করার ঘটনাটি সত্য বলে প্রমাণ হয়। এই সময় ওয়ার্ডে থাকা অন্য একজন চিকিৎসক বাচ্চার সমস্যা হলে কেউ বাঁচবেননা বলে সংশ্লিষ্ট নার্স ও স্টাফদের সাথে ঘটনার ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করলে সোমবার বিকেল অনুমান দেড়টায় হাসপাতালের ষ্টোরকিপার সোলেমান এসে শিশুটির পিতামাতাকে ২ হাজার টাকা দিয়ে সিলেটে যাওয়ার নির্দেশ দেন। শিশুটির পিতামাতা সিলেটে যাওয়ার সামর্থ নেই বলে ওয়ার্ডের ডাক্তার ও নার্সসহ স্টাফদের জানালে তারা ঐ শিশুটিকে চিকিৎসা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। শিশুটিকে নির্ধারিত ওয়ার্ডের বেডে থাকাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ডাক্তার ও নার্সরা মিলে শিশুর বেড বাতিল করে ঐ বেডে অন্য রোগীকে ভর্তি করে দেয়। পরে হাসপাতালের ৬ তালায় শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে শিশুটিকে নিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনেন বাচ্চু মিয়া ও তার স্ত্রী। বাচ্চু মিয়া বলেন,অভিযোগ দায়েরের পর ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে আমরা আমাদের সন্তানকে নিয়ে সিলেটে চলে যাই। বর্তমানে আমাদের সন্তান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ তালার ২৩ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। কর্তব্যরত ডাক্তাররা বলছেন অপারেশন করে শিশুটির পা থেকে সুইচ বের করে দেবেন।
বাচ্চু মিয়া বলেন, ইঞ্জেকশনের সুই বিদ্ধ করে আমার সন্তানকে জখমের ঘটনায় জড়িত নার্স ও ডাক্তার যেই হউকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি অভিযোগ দায়ের করেছি। সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ আনিসুর রহমান বুধবার (৩১ আগষ্ট) বিকেল দেড়টায় বলেন,অভিযোগটি পাওয়া মাত্র আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলেছি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর এ ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।