যে কোন সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নিয়ে সঙ্কট তৈরি হতে পারে, ছাপানো বইয়ের মজুদ ফুরোতে পারে, গ্রাহকের তথ্য সংযুক্তি ছাপানোর মেশিনেও সমস্যা হতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়ে গোটা দাফতরিক কার্যক্রম চালানোটাই সমীচীন। অথচ করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে কাজে স্থবিরতা কিংবা সাময়িকভাবে চরম সঙ্কট তৈরি হওয়ার বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত। গণামাধ্যমের প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উঠে এসেছে সম্প্রতি। জেনে কিছুটা বিস্মিতই হতে হয় যে, আড়াই মাস ধরে পাসপোর্ট ছাপানো বন্ধ, ফলে সঙ্কটে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
উদ্বেগের বিষয় হলো গত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের সার্ভার সঠিক সময়ে হালনাগাদ না করায় পাসপোর্ট তৈরির কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। জুন মাসে পাসপোর্ট অধিদফতরের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সার্ভারের (এমআরপি) ধারণক্ষমতা নির্ধারিত তিন কোটির বেশি সীমা অতিক্রম করে। এ কারণে পাসপোর্ট প্রিন্ট বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়া হয় ব্যাপক। ফলস্বরূপ সারাবিশ্বে কর্মরত প্রবাসীদের অনেকেরই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তারা বিপাকে পড়েন। পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই তারা অবস্থানরত দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন। একই সঙ্গে পাসপোর্ট না পেয়ে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করার আবেদনও করতে পারছেন না। কেউ কেউ ছুটিতে দেশেও আসতে পারছেন না। রাস্তায় চলাচল থেকে শুরু করে কর্মস্থলেও পড়ছেন ঝামেলায়। সমস্যা বেশি মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত প্রবাসীদের। উপায়ান্তর না পেয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে হাতে লিখে। অবশ্য উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একের পর এক বিভিন্ন দূতাবাস থেকে জরুরী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রবাসীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়ার কথা গণমাধ্যমকে বলেছেন। তবে এটাও স্বীকার করেছেন যে, জোড়াতালি দিয়েই চলছে পাসপোর্ট অধিদফতরের কাজ। যদিও পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ইতিবাচকভাবে উত্তরণের জন্য যা যা করণীয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে। এই সচেতনতা ও গতি আগে থেকে বিরাজিত থাকলে এই সাময়িক সঙ্কট দেখা দিত না বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। সময়ের কাজ সময়ে করাটাই সমীচীন।
আমরা আশা করছি, পাসপোর্ট সমস্যার সমাধান হবে অচিরেই। তবে এক্ষেত্রে প্রবাসীদের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেননা তারাই বেশি ভুক্তভোগী।