যৌক্তিক সমাধানে আসুন

7

গত ৯ আগষ্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা-বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। তাঁদের দাবি ছিল দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা। ১১ দিন পর গত ২০ আগষ্ট অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হবে। এতে সম্মত হয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেন।
কিন্তু বেঁকে বসে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একটি অংশ। তারা এই সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় রবিবার রাতে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে পুনরায় বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসন ও শ্রম অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা ঘোষণা করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ‘সম্মান’ জানিয়ে তাঁরা আগের ১২০ টাকা মজুরিতেই সোমবার থেকে কাজে যোগদান করবেন। সোমবার চা শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর অন্যতম চা। প্রতিবছর একটি বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় এই খাত থেকে। এই খাতের স্বাভাবিকতা নষ্ট হলে প্রকারান্তরে দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই এখানে যে শ্রম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা সবচেয়ে যৌক্তিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা চা শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানাই। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে আন্দোলন করেছেন। আবার চা-শিল্প এবং দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন তাঁদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করাটাও জরুরি।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কারো অজানা নয়। দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারি এবং সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম হু হু করে বেড়েছে। জীবনযাত্রার ন্যূনতম মানও রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের চা শ্রমিকদের জীবনে তা আরো কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা যেটুকু বেশি মজুরি দাবি করেছেন তাকে মোটেও অযৌক্তিক বলা যাবে না। আবার ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধিতে যেহেতু তাঁরা সম্মত হননি, তাই এই বর্ধিত বেতন তাঁরা এখন নিচ্ছেন না। এটাও অন্যায্য কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এখন বাগান মালিক, প্রশাসন ও শ্রমিক নেতারা মিলে ঠিক করবেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মজুরি কতটুকু বৃদ্ধি করা যৌক্তিক হবে। কিন্তু কোনোক্রমেই তা অচলাবস্থার দিকে যাওয়া সংগত হবে না।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না আসায় শ্রমিকপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মেনে নেব। ’ আমরা মনে করি, সব পক্ষেরই উচিত শ্রমিকদের এই উদারতা যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা। দুর্মূল্যের বাজারে তাঁরা যাতে খেয়ে-পরে কিছুটা ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারে, তার নিশ্চয়তা দেওয়াটা জরুরি। আমরা আশা করি, চা-শিল্পের স্বার্থে সবচেয়ে যৌক্তিক উপায়ে বর্তমান শ্রম অসন্তোষ নিরসন করা হবে।