দাপুটে জয়ে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ

5

স্পোর্টস ডেস্ক :
বোলাররাই অর্ধেক কাজ করে রেখেছিলেন। বাকি দায়িত্বটা সহজেই সারলেন ব্যাটাররা। দাপুটে জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতায় ফিরলো নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। হারারেতে আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ১৫ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে হেসেখেলেই হারিয়েছে টাইগাররা।
বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য ছিল মোটে ১৩৬ রানের। ব্যাটারদের ওপর তাই এবার তেমন চাপ ছিল না। তারপরও সুবিধা করতে পারলেন না মুনিম শাহরিয়ার। আরও একবার ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন।
লিটন দাস ওপেনিংয়ে ঝড়ো সূচনা করেন। ফলে ২৭ বলে ৩৭ রানের জুটি এসেছে। কিন্তু মুনিম ৭ বলে ৭ রান করেই বোল্ড হয়েছেন রিচার্ড এনগারাভার বলে। আগের ম্যাচে মুনিম করেছিলেন ২ রান।
সঙ্গী হারালেও লিটন খেলেছেন নিজের মতো। বাংলাদেশ দলে অন্যতম ধারাবাহিকতার প্রতীক হয়ে ওঠা এই ব্যাটার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি ফিফটি তুলে নেন মাত্র ৩০ বলে। এগিয়ে যাচ্ছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
কিন্তু শন উইলিয়ামসকে সুইপ করতে গিয়ে লিটন ভুল করে বসলেন, পড়লেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। ৩৩ বলে ৬ চার আর ২ ছক্কায় গড়া লিটনের ইনিংসটি ছিল ৫৬ রানের।
এর তিন বল পর আরও একটি উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এবার এনামুল হক বিজয় (১৫ বলে ১৬) হন সিকান্দার রাজার শিকার। ক্রস খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ডানহাতি এই ব্যাটার ধরা পড়েন ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
তবে এরপর আর দলকে কোনো বিপদে পড়তে দেননি নাজমুল হোসেন শান্ত আর আফিফ হোসেন। চতুর্থ উইকেটে ৪৮ বলে ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। আফিফ ২৮ বলে ৩০ আর ২১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে মোসাদ্দেক হোসেনের বিধ্বংসী বোলিংয়ের পরও জিম্বাবুয়েকে অলআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। সিকান্দার রাজার ৫৩ বলে ৬২ রানের ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেটে ১৩৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় জিম্বাবুয়ে।
মোসাদ্দেক হোসেন টানা ৪ ওভার বোলিং করে ফেলেন। ২০ রান দিয়ে উইকেট নেন ৫টি। জিম্বাবুয়ের হয়ে একাই লড়াই করলেন সিকান্দার রাজা। ৫৩ বলে ৬২ রান করেন তিনি। আগের ম্যাচে ২৬ বলে করেছিলেন অপরাজিত ৬৫ রান।
প্রথম ম্যাচে ১৭ রানে হার। জিম্বাবুয়ের কাছে এই পরাজয়ের পর অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, একাদশ বাছাই করা নিয়ে।
টানা দ্বিতীয় দিনে দ্বিতীয় ম্যাচ। এবার দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে নুরুল হাসান সোহানের বাংলাদেশ। যথারীতি ৩ পেসার। তাসকিন আহমেদকে বাদ দিয়ে নামানো হয় হাসান মাহমুদকে। নাসুম আহমেদকে বাদ দিয়ে নেয়া হয়েছে স্পিনার শেখ মেহেদি হাসানকে।
দ্বিতীয় ম্যাচেও টস হার এবং প্রথমে ফিল্ডিং। তবে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান এবার আর পেসার দিয়ে আক্রমণ শুরু করেননি না। নিয়ে আসলেন স্পিনার। তাও নিয়মিত স্পিনার শেখ মেহেদি নয়, মোসাদ্দেকের হাতে তুলে দিলেন বল।
বল হাতে নিয়েই জিম্বাবুইয়ানদের ওপর চড়াও হলেন মোসাদ্দেক। তার করা প্রথম ওভারেই দুই ব্যাটারকে হারায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার রেগিস চাকাভাকে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মোসাদ্দেক।
ওভারের শেষ বলে কভার পয়েন্টে মেহেদির হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন ওয়েসলি মাধভিরেকে। প্রথম ম্যাচে এই মাধভিরেই ৬৭ রান করে বাংলাদেশের পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। ৫ রানের মাথায় পড়ে দ্বিতীয় উইকেট।
এরপরও মোসাদ্দেকের ঘূর্ণিজাল থেকে মুক্তি মেলেনি জিম্বাবুয়ের। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে আবারও আঘাত হানেন তিনি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে মোসাদ্দেকের বলে উইকেট হারান জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ওপেনার এবং অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে প্রথম স্লিপে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন আরভিন। ৬ রানে বিদায় নেন তিনজন ব্যাটার।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করতে এসে শন উইলিয়ামসকে রিটার্ন ক্যাচে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন মোসাদ্দেক। ৭ বলে ৮ রান করে আউট হন উইলিয়ামস।
এরপর সপ্তম ওভারে বল করতে এসে আবারও উইকেট নেন টাইগার অফস্পিনার। এবার প্যাভিলিয়নের পথ ধরান মিল্টন সুম্বাকে। ওভারের ৫ম বলে সুইপ শট খেলতে গেলেন সুম্বা। কিন্তু ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরলেন হাসান মাহমুদ। সে সঙ্গে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকারি হয়ে গেছেন মোসাদ্দেক।
প্রথম ম্যাচেও বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছিলেন সিকান্দার রাজা। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা তার বেশ পরিচিত। বিপিএল-ডিপিএল খেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটার, বিশেষ করে বোলারদের প্রায় মুখস্ত করে ফেলেছেন তিনি। যে কারণে প্রথম ম্যাচের মত দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে লড়াই করেছেন তিনি।
প্রথম ম্যাচে ২৬ বলে করেছিলেন অপরাজিত ৬৫ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেন যখন একদিকে ধ্বংসলীলা চালিয়েছেন, অন্যদিকে ব্যাট হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সিকান্দার রাজা। শুধু দাঁড়িয়েছিলেন বললে ভুল বলা হবে। একা হাতে লড়াই চালিয়েছেন তিনি।