চালের বাজার স্থিতিশীল

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাজার চড়া থাকলেও চালের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। চার দফায় এ পর্যন্ত ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতিও দেয়া হয়। বেসরকারীভাবে চাল আমদানিও শুরু হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সম্প্রতি ভারত থেকে প্রায় চার হাজার ৪৬০ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। এর প্রভাবে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। খুব শীঘ্রই চালের দাম কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমদানি শুরু হওয়ার পর চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, আমদানি বেশি হলে চালের দাম কমে আসবে। পাশাপাশি মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।
আগামী সপ্তাহে দাম কমতে শুরু করবে বলে আশা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে চাল আমদানিকারকরা বলছেন, সরকার শুল্ক কমানোর সুবিধা দেয়ার পর ভারত চালের দাম বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ডলারের মূল্যও বেড়ে গেছে। এ দুই কারণে আমদানি করা চাল বাজার পর্যন্ত আসতে যে খরচ হচ্ছে, সেটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হওয়া চালের দামের চেয়েও বেশি। এ কারণে চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তাঁরা।
খাদ্য সচিব মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা মনিটরিং জোরদার করেছি। দেশের সব এলাকায় মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। কোথাও অতিরিক্ত মজুদ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতে কেউ মজুদ বাড়িয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে চালের দাম বাড়াতে পারবে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত চার হাজার ৪৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে। আরও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, চাহিদার ভিত্তিতে বেসরকারীভাবে প্রাথমিকভাবে ১৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হবে।
রাজধানীর চালের অন্যতম পাইকারি বাজার হচ্ছে বাবুবাজার। এই বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, আমদানি করা চাল এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তবে আমদানি অব্যাহত থাকলে হয়তো আগামী সপ্তাহে চলে আসবে। যতটুকু জানতে পেরেছি, আমদানি করা চালে খরচ পড়ছে বেশি। আমদানিকৃত চালের দাম স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি থাকলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
চাল আমদানির অনুমতি পেয়ে ভারত থেকে ৫০০ টন মোটা চাল আমদানি করেছে মেসার্স কাজী সুবহান ট্রেডিং কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কাজী সুজন বলেন, আমরা প্রায় ৫০০ টন মোটা চাল ‘স্বর্ণা’ আমদানি করেছি। ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভারতে চালের দাম বাড়তি থাকায় চাল আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। স্বর্ণা চাল দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজি, সেই চাল ভারত থেকে আমদানি করতে আমাদের খরচ হয়েছে ৪৯ টাকা। প্রতি কেজিতে তিন টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে আমাদের।
কাজী সুজন বলেন, অনলাইনে ডলারের দাম দেখানো হচ্ছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা করে, কিন্তু ব্যাংকে পেমেন্ট দেয়ার সময় প্রতি ডলার ১০১ টাকা দাম ধরা হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হলে ডলারের দাম কমাতে হবে এবং একই সঙ্গে আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে এভাবে চাল আমদানি করা সম্ভব না।
চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হেনা এন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল হাকিম মন্ডল বলেন, বর্তমানে ভারতে চালের যে দাম, ডলারের যে দাম ও সরকারের ডিউটি সব খরচ মিলিয়ে আমরা হিসাব করে দেখেছি আমদানি করা চালের দাম দেশের স্থানীয় বাজারের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে। এ কারণেই আমরা আপাতত চাল আমদানি করার সাহস পাচ্ছি না।
চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইয়ান ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোঃ সুজন বলেন, ডলারের দাম ও ভারতে চালের দাম বাড়তি এবং কমানো হয়নি সম্পূর্ণ শুল্কও। এ অবস্থায় চাল আমদানি করা হলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমাদের। যার কারণে আপাতত চাল আমদানি করার চিন্তাও করছি না আমরা।
এদিকে দেশের বাজারে চাল আমদানির কী ধরনের প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে রাজধানীর সবচেয়ে বড় দুই চালের পাইকারি বাজার- বাবুবাজার ও কাওরান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানিকৃত চালের প্রভাব এখনও এসব বাজারে পড়েনি। তবে আমদানির কারণে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
রাজধানীর কাওরান াজারের পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মোঃ সায়েম বলেন, কাওরান বাজারে এখনও আমদানি করা চাল আসেনি। শুনেছি অল্প পরিসরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চাল আমদানি করেছে। সেই চাল বাজারে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। বাজারে আমদানি করা চাল না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না, দাম বাড়াবে না কমবে। তিনি বলেন, এখন বাজারে মোটা চাল স্বর্ণা কেজি ৪৮-৫০ টাকা, আটাশ ও পাইজাম চাল কেজি ৫২-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকন চাল মিনিকেট কেজি ৬৮-৭০ টাকা ও নাজিরশাইল কেজি ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
করেনার কাশাঘাতে বিধ্বস্ত বিশ্বে নতুন সঙ্কট তৈরি হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর পভাবে গোটা বিশ্ব টালমাটাল। এতে খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি নিত্যপণ্য, জ্বালানি সব কিছুতে দাম বাড়তে থাকে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। হু হু করে বাড়তে থাকে চালের দাম। এই পরিস্থিতিতে শুল্ক কমিয়ে বেসরকারীভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। চাল আমদানি শুরু হওয়ায় বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এর প্রভাবে খুব শীঘ্রই চালের বাজার কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।