কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বিতীয় দফা সংলাপের চতুর্থ দিনে আমন্ত্রিত ৩টি দলের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি অংশ নিলেও যায়নি বিএনপি। বিএনপি অবশ্য আগেই জানিয়েছিল তারা এই ইসির সঙ্গে সংলাপে যাবে না। বুধবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ভোটের আগ পর্যন্ত বিএনপির জন্য অপেক্ষা করবে ইসি। সংলাপকালে গণতান্ত্রিক পার্টির পক্ষ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী দল ও যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তিকে নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত করার দাবি করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে সংলাপে অংশ নেয়া প্রতিটি দলই ভাল ভাল মতামত দিয়েছে। তারা বলেছে, তারা ভাল নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যে বিশ্বাস করে। বিএনপির সংলাপে অংশ না নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, আমরা বিএনপির জন্য ওয়েট করব। তবে আমরা তাদের জোর করে আনতে পারব না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো রাজনৈতিক দল ইসির সংলাপে অংশ নিয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে তাদের সবার মনোভাব ইতিবাচক। নির্বাচনে যাতে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিতের কথা বলেছে রাজনৈতিক দলগুলো। আমরাও বলেছি, সত্যিকার অর্থে এটিই আমাদের একমাত্র দায়িত্ব, যেন সকল ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। এটাই গণন্ত্রের ভিত্তি।
সিইসি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু আমরা বলেছি, আমরা আমাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখব। এ বিষয়ে কেউ না করেনি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি, ঐক্যটা আমাদের নয়, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছি আপনারা ঐক্যের চেষ্টা করুন এবং ঐক্য হলে আমরা আনন্দিত হবো।
আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছি, আইনকানুন এবং সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাব।তবে বলেন, ইসির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সবসময় আছে বা নাই তা আমরা বলব না। একটা দলের হয়তো অনাস্থা আছে। আবার আমাদের সঙ্গে যারা সংলাপে বসেছে, তাদের প্রত্যেকের আমাদের প্রতি আস্থা আছে। তিনি জানান, সংলাপ শেষ হলে আলোচনার সারসংক্ষেপ সবাইকে অবহিত করা হবে।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর বলেন, বিএনপি সংলাপে এলে ভাল হতো। তবে আমাদের চলমান সংলাপ ভাল হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সুচিন্তিত মতামত দিয়েছে। এগুলো আমাদের ভাল নির্বাচন করার জন্য সহায়ক হবে। তবে যারা সংলাপে আসেননি তারা এলে আরও ভাল হতো। এজন্যে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমরা আগেও বিএনপিকে ইভিএমের বিষয়ে সংলাপ করার আমন্ত্রণ করেছি আসেনি।
এখন যে সংলাপ চলছে তাতেও আসেনি। সামনে যোগাযোগ আবারও থাকবে। ইসির প্রয়াস অব্যাহত থাকবে ভোটের আগ পর্যন্ত। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জাতীয় র্নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। আগামী বছরের শেষে অথবা তার পরের বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন হবে। তাই এখনও যথেষ্ট সময় রয়েছে।
বুধবার প্রথমেই ইসির সংলাপ হয় গণতন্ত্রী পার্টির সঙ্গে। সংলাপে অংশ নিয়ে এ দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয় তারা সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চান। এছাড়া সব নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার চায় দলটি। গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, এবারের কমিশন যেহেতু সাংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত হয়েছে। তাই ইসির কাছে জনগণের দায়িত্ব ও প্রত্যাশা অনেক বেশি।
গণতন্ত্রী পার্টি চায় ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছে তাকে দেব’ এ নীতির আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এছাড়া নির্বাচনে কালো টাকা, পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্যে সবধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করা যেতে পারে। তবে, ইভিএম যেহেতু মেশিন, তাই কোন অবস্থাতেই যাতে কেউ প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকিং না করতে পারে সে ব্যাপারে ইসিকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও গণফ্রন্টকে।