কাজিরবাজার ডেস্ক :
অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার নয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি দেশটির একজন ঝানু রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। বুধবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটে রনিল বিক্রমাসিংহে মোট ২২৫ ভোটের মধ্যে ১৩৪ ভোট পান। দুল্লাস আলহাপেরুমা ৮২ ও অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েকে তিন ভোট পান। তবে নির্বাচনের পরাজয় মেনে নিয়েছেন দুল্লাস আলহাপেরুমা। জয়ের পর রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, সঙ্কটে জর্জর শ্রীলঙ্কায় বিভক্তির অবসান হয়েছে।
পার্লামেন্টে দেয়া বিজয়ী ভাষণে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এখন আর কোন বিভক্তি নেই।’ পরাজিত প্রার্থী দুল্লাস আলহাপেরুমা বলেন, আমরা আশা করব নয়া প্রেসিডেন্ট জনতার দুর্ভোগের কথা শুনবেন। তিনি বলেন, আমি পার্লামেন্ট সদস্যদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমি আশা করছি অন্তত এখন আপনারা জনগণের দুর্ভোগের কথা শোনার মানসিকতা গড়ে তুলবেন।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। কারণ তারা রনিলকে রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে মনে করে। বিক্ষোভকারীদের নেতা মেলানি গুনাথিলাকে বলেন, আমরা বর্তমানে আমাদের কৌশল নিয়ে আলোচনা করছি এবং পুনর্গঠন করছি। রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অবশ্যই আমাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাব। কারণ আমরা এই ফল আশা করিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা খুব ভাল করেই জানি যে রনিল বিক্রমাসিংহে গোতাবায়া রাজাপাকসের মতো নন। তিনি আরও ধূর্ত ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি জরুরী অবস্থা জারি করে আমাদের ওপর অত্যাচার করেন। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা এমন একজন নেতা পাওয়ার দাবিদার যিনি আসলে জনগণের জন্য চিন্তা করেন, তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন না।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান গোতাবায়া রাজাপাকসে। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর পৌঁছার পরপরই ই-মেলে দেশটির স্পীকার বরাবর পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন। ১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম দেশটির কোন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলেন। পরে শ্রীলঙ্কানদের ক্ষোভ প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের দিকে ঘুরে যায়। এই পর্যায়ে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিলের নাম ঘোষিত হয়।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগের পর স্পীকার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহের নাম ঘোষণা করেন। রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে গেলেও রনিল তা উপভোগ করার যথেষ্ট সময় পাবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিক্ষোভকারীরা রনিলকে রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বিবেচনা করে।
এর আগে দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, সরকারী সম্পত্তি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা পেয়েছেন সেনাসদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে দুটি এ্যাসল্ট রাইফেল কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে।
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কট ও গণআন্দোলনের মুখে একটি সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান গোতাবায়া। এই যাত্রায় তার সঙ্গী হন স্ত্রী ও দুই নিরাপত্তারক্ষী। এরপর তিনি সিঙ্গাপুরে যান।