স্টাফ রিপোর্টার :
ভারী বর্ষণ আর সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিলো সিলেট। গত মাসের মধ্যভাগে বন্যা আঘাত হানে সিলেটে। প্রায় দুই সপ্তাহ কবলিত থাকার পর সিলেটের কিছু কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও কিছু এলাকা নিমজ্জিত। এসব এলাকার লোকজন এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, জেলার ১৪ হাজার লোকজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তবে মহানগরীর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সকল পরিবার নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন। এ পর্যন্ত জেলার ১৩ উপজেলায় ২১১২ মেট্রিকটন চাল ও নগদ প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া সিলেট নগরীর বন্যাকবলিত ওয়ার্ডগুলোতে ১৪০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় বন্যায় ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবারে ২৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪৩৩ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৯১টি ঘরবাড়ি। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত ৫ কোটি টাকা ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছে। এসব পরিবারকে বসতঘর মেরামত করতে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া বন্যাদুর্গতের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ২ হাজার ১১২ মেট্রিক টন চাল, ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১০ লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য, আরও ১০ লক্ষ টাকার গো-খাদ্য এবং নগদ ২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাছাড়া জেলার ১৩ উপজেলায় ২ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহমঞ্জুরি আরও ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ১ হাজার ৯ শত ২৮ মেট্রিকটন চাল, ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত ৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা, ১০ লক্ষ টাকার গো-খাদ্য ও আরও ১০ লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ বলেন- আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ১৪০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করে যাচ্ছি। সিটি কর্পোরেশন বন্যাদুর্গতদের পাশে রয়েছে। জেলার সবকয়টি উপজেলায় বন্যাদুর্গতের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ঘর মেরামতের জন্য টাকা প্রদান করা হলেও মহানগরীতে এখনো এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি। নির্দেশনা পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। তবে শুধু কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটে নদ-নদীর পানি কমছে। কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও সেটি দ্রুতগতিতে নামছে না। সিলেটের নদ-নদীর পানিগুলো সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর দিয়ে নামে। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে পানি থাকার কারণে পানি নামতে সময় লাগছে।