শ্রীলঙ্কায় প্রমাণ হলো জনগণের ক্ষমতাই আসল

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজনীতিবিদের প্রধান উদ্দেশ্য জনগণকে সেবা দেওয়া। কিন্তু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তারা তাদের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজেদের নিয়ে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয় জনগণ কতটা শক্তিশালী। দেশটি স্বাধীনতার পর বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। কোনো পদক্ষেপেই কাটছে না সংকট। তাছাড়া শ্রীলঙ্কাকে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে রেখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
শনিবার (৯ জুলাই) শ্রীলঙ্কায় যা ঘটেছে তা জেমস শার্লির লেখা সত্যবাদের কথাই মনে করিয়ে দেয় যে, রাজদণ্ড ও মুকুটকেও একদিন তলিয়ে যেতে হবে।
ওই দিন দুপুর থেকেই দ্বীপরাষ্ট্রের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বাস, ট্রেন ও গাড়িতে দলে দলে মানুষ আসতে থাকে রাজধানী কলম্বোয়। বিপদ আঁচ করে শুক্রবার রাতেই প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয় সেনাবাহিনী।
প্রবল উৎকণ্ঠায় রাত কাটলেও জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে সকালে। সব বাধা পেরিয়ে করে হাজার হাজার মানুষ কলম্বোয় রাজাপাকসের সরকারি প্রাসাদ ঘিরে ফেলে। কাঁদানে গ্যাসের গোলা ছুঁড়ে, শূন্যে গুলি ছুঁড়েও তাদের রুখতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। এক সময় ব্যারিকেড ভেঙে স্রোতের মতো মানুষ ঢুকে পড়তে শুরু করে প্রাসাদের ভেতরে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে বলে।
সেদিন রাতেই স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে জানান, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন প্রেসিডেন্ট। বুধবার (১৩ জুলাই) তার পদত্যাগ করার কথা ছিল। তবে পদত্যাগ না করে প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়ে মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন তিনি।
শ্রীলঙ্কায় মাসব্যাপী চলা বিক্ষোভের চূড়ান্ত রূপ নেয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলার মধ্যে দিয়ে। এরপর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাড়িতেও। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে দেশটির সরকার জ্বালানি তেলসহ প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে পারছে না। এতে সেখানের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেশটিতে ঘটে গেছে জনগণের অভ্যুত্থান। পতন ঘটতে যাচ্ছে রাজাপাকসে পরিবারের শাসন। শ্রীলঙ্কার সরকারে এই পরিবারের ছয়জন সদস্য দায়িত্বপালন করেছে, যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। একসময় তারা নিজেদের সর্বশক্তিমান ও অজেয় মনে করতেন।
গোতাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতা গ্রহণের ৩০ মাসের মধ্যে এরকম ঘটনা ঘটবে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সংসদে তাদের দলের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু জনগণের বিক্ষোভের মুখে সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।