আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরকারের শুদ্ধি অভিযানের নেপথ্যের কারণ খুঁজছে বিএনপি

20

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুর্নীতি, মাদক ও ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারের শুদ্ধি অভিযান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি এর নেপথ্যের কারণ খুঁজছে বিএনপি। সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পেলেও সম্ভাব্য কারণগুলো বিএনপির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে- ধারণা বিএনপি নেতাদের। এই অভিযানকে এখন পর্যন্ত সরাসরি স্বাগত না জানালেও ভেতরে ভেতরে উলস্নসিত তারা। অনেকটা ‘ঈদের খুশি’তে দিন কাটছে তাদের।
সূত্রমতে, এই অভিযানের পুরোটাই ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। কেন এ ধরনের অভিযান চালানো হচ্ছে তার প্রকৃত কারণও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সব ধরনের কারণ নিয়ে বিএনপিতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিএনপি নেতাদের মূল্যায়ন এই অভিযান যদি সরকারের রাজনৈতিক কৌশল হয় তাহলে নিজেদের পাতা ফাঁদে এবার তাদের পরতে হবে। আর যদি অন্য কোনো মহলের হস্তক্ষেপে হয় তাহলেও এই ফাঁদ থেকে ক্ষমতাসীনদের বের হওয়া সহজ হবে না। সবমিলে এই অভিযানের ফল সবদিক থেকে বিএনপির জন্য ইতিবাচক হবে।
কেন বিএনপি এই অভিযানে উল্লসিত এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, কমপক্ষে আধাডজন কারণ আছে। এগুলো হচ্ছে- এক. গত এক দশকে রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থির করার মতো বিএনপির কোনো পদক্ষেপই কাজে আসেনি। এবার এই অভিযানে ক্ষমতাসীনদের পেশিশক্তির উপর আঘাত আসায় অস্থির অবস্থা তৈরি হতে পারে। দুই. ক্ষমতাসীনরা প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল। আর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনেকেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে গেলে ক্ষমতাসীনদের ভীত নড়ে যেতে পারে। তিন. তৃতীয় কোনো শক্তি বা আন্তর্জাতিক চাপে যদি ক্ষমতাসীনরা এই অভিযান চালিয়ে থাকে তাহলে যারা চাপ দিচ্ছে তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একের পর এক কৌশল করবে যা ক্ষমতাসীনরা সামাল দিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে একটি পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি তেমন সমস্যায় পড়বে না। আর আঁতাতকারী কোনো নেতাকর্মী যদি থেকে থাকে তাদের নিয়ে বিএনপিতে দুশ্চিন্তা নেই। চার. এই অভিযানে মুষ্টিমেয় যে কজনের হাতে দেশের সিংহ ভাগ সম্পদ রয়েছে তারা নিজেদের স্বার্থে অভিযান বন্ধ বা নতুন ষড়যন্ত্রের দিকে যেতে দ্বিধা বোধ করবে না। পাঁচ. দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ এবং মাদক ব্যবসায়ীরা সর্বক্ষেত্রে চালকের আসনে অবস্থান করার বিষয়টি এই অভিযানের মাধ্যমে মানুষ প্রমাণ পেয়েছে। এজন্য ইচ্ছা করলেই এই অভিযান বন্ধ করা সহজ হবে না। ছয়. শেষ পর্যন্ত এই অভিযান বন্ধ করলেই এ ইস্যুত আন্দোলন বেগবান করবে বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, গত এক দশকে ক্ষমতাসীনদের একের পর এক কৌশলের কাছে বিএনপি ধরাশায়ী হয়েছে। এবার নিজেদের কৌশল বা পাতা ফাঁদে পড়তে পারে সরকার। তারা যে অভিযান শুরু করেছে তা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভব। কারণ এই অভিযান অব্যাহত থাকলে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়বে। যা তাদের পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে এই পর্যায়ে অভিযান বন্ধ করলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। উভয় সংকটে পরা ক্ষমতাসীনদের আরও বেকায়দায় ফেলতে এবার বিএনপি যে কৌশল নেবে তা ফলপ্রসূ হতে পারে। এজন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা উলস্নসিত।
জানা গেছে, সরকারি দলের ভেতরের এই দুর্নীতির ইস্যুটিকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ-সেমিনারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাদক ও জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে সরকারের বিরুদ্ধে তারা জনমত গঠন করবে। পরবর্তীতে দলের সব কর্মসূচিতে দুর্নীতির এসব বিষয়গুলো তুলে ধরে সরকারের পদত্যাগের জোরালো দাবি জানাবে বিএনপি। একই সঙ্গে নতুন নির্বাচনের দাবিও করবে তারা। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট কারণ জানার পরে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক পদক্ষেপ নেবে বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিনিয়র নেতারা ছাড়াও দলের প্রায় সর্বস্তরের নেতাকর্মী এই অভিযানে খুশি। পাশাপাশি এই অভিযানের এক পর্যায়ে দলের কিছু নেতাকর্মী বেকায়দায় পড়ার সম্ভাবনাও তারা উড়িয়ে দিচ্ছে না। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এই অভিযানে সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ফলের আশা করছেন তারা। এছাড়া নিজেদের পতন ইতিহাস বিএনপিকে আশা দেখাচ্ছে। যেমন ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন ক্ষমতার পালাবদল হয় তখন মূল প্রচারণাই ছিল দুর্নীতি। তখন বলা হয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত দুর্নীতিতে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। এবার ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতির বিষয়টি যেভাবে সমানে আসছে- এতে বিএনপি তাদের পুরনো কথা মনে করছেন।
এই অভিযানের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্য মত হচ্ছে, তারা শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত দেখতে চান। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দেশে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকার এটাকে আর লুকাতে পারছে না। সেজন্য দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযান চালাতে তারা বাধ্য হয়েছে। তবে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে- শুধু তারাই নন, এর সঙ্গে আরও অনেকে আছেন। যারা তাদের মদদ দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে- তারাও জড়িত। এ রকম অপরাধীদের যদি চিহ্নিত না করা হয়- তাহলে যে উদ্দেশে সরকার এই অভিযান চালাচ্ছে তা পুরোপুরি সফল হবে না।
অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই অভিযানের মধ্য দিয়ে সরকার যদি সত্যিই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে চান তাহলে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার সদিচ্ছাও বিএনপির আছে।’