হজ¦ ইবাদত ॥ ঐক্যের প্লাটফর্ম

21

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান :
পবিত্র হজে¦র ৫ দিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা তথা তারবিয়াত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু হজ¦যাত্রীদের সংখ্যা বিবেচনায় সউদী মুয়াল্লেমরা (যারা মিনা-আরাফাতে তাঁবু ও হজ¦যাত্রীদের জেদ্দা থেকে মক্কা এবং মদীনায় যাতায়াতের গাড়ির ব্যবস্থা করে থাকেন) একদিন আগের রাত থেকেই হজ¦যাত্রীদের তাঁবুর শহর মিনায় নেয়া শুরু করেন। সে হিসেবে মূলত আজই শুরু হচ্ছে হজে¦র আনুষ্ঠানিকতা। হজ¦যাত্রীরা আজ বাদ এশা পবিত্র মক্কার নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরাম বেঁধে মিনায় রওনা হবেন। এ সময় গুঞ্জরিত হবে তালবিয়া- ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল-হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকা লাক। মহান হজ্ব ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত। কেউ যদি হজ্ব ফরজ হওয়ার বিষয় মানতে অস্বীকার করে সে কাফের হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, ‘‘সামর্থ্যবান লোকদের প্রতি আল্লাহ উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহর হজ্ব আদায় করা ফরয। আর কেউ যদি তা মানতে অস্বীকার করে তাহলে (জেনে নিক) আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষী নন’’। (আল ইমরান: ৯৭)
হজ্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, একবার নবী করীম (সা:) জিজ্ঞাসিত হলেন, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান’’। তারপর প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোন আমলটি? তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’’। তারপর প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘‘মাবরুর হজ্ব’’-(বুখারী ও মুসলিম)।
আর মাবরুর হজ্ব হচ্ছে ঐ হজ্ব, যা আদায় করার সময় হাজী সকল প্রকার গুনাহ বা নিলর্জ্জতার কাজ থেকে বিরত থাকে। এ ধরনের মাবরুর হজ্ব আদায় করতে পারলে আল্লাহ তা’আলা জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। নবী করীম (সা:) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্ব আদায় করলো এমন অবস্থায় যে, কোন প্রকার কাম, প্রবৃত্তি চর্চা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত থাকেনি, সে এমনভাবে হজ্ব শেষে ফেরত আসবে যেমন নবজাতক শিশু মায়ের পেট থেকে (গুনাহমুক্ত অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়। -(বুখারী ও মুসলিম)
আরেকটি হাদীসে তিনি এরশাদ করেছেন … মাবরুর হজ্বের প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত। (বুখারী ও মুসলিম) এত বড় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি আল্লাহ তা’আলা জীবনে মাত্র একবার ফরয করেছেন। এরপর পুনরায় করলে তা নফল হবে। যদি আল্লাহ প্রতি বৎসরই ফরয করতেন, তাহলে সেটা আদায় করা নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন হয়ে যেতো। হিজরী ৬ষ্ঠ সনে মতান্তরে নবম অথবা দশম সনে হজ্ব ফরজ হওয়ার আয়াত নাযিল হলে নবী করীম (সা:) এক খুৎবায় তার ঘোষণা দিতে গিয়ে বললেন, ‘‘হে জনতা, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি হজ্ব ফরজ করে দিয়েছেন, তাই হজ্ব আদায় করে নাও। একজন বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তা-কি প্রতি বৎসরই? তিনি উত্তর দিলেন না। লোকটি তিন তিন বার প্রশ্নটি করতে থাকলো। শেষে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, আমি যদি বলতাম হ্যাঁ, তাহলে প্রতি বৎসরই ফরজ হয়ে যেতো। আর তোমরা তা পালন করতে পারতে না। অত:পর তিনি বললেন, যেটা আমি বলি না, সেটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করো না। তোমাদের পূর্বের জাতিগুলো ধ্বংস হয়েছে বেশি বেশি প্রশ্ন করা, আর নবীদের সাথে মতবিরোধের কারণে। আমি তোমাদের যা করার নির্দেশ দেই, সাধ্যমত তা করার চেষ্টা করো, আর যে বিষয় থেকে নিষেধ করি তা বর্জন করো।’’-(বুখারী ও মুসলিম)
হজ্ব ফরজ হয়ে গেলে বিলম্ব না করে সাথে সাথেই আদায় করা উচিৎ। বিলম্ব করে কয়েক বৎসর পরে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু বিলম্ব করার কারণে গুনাহগার হতে হবে। আর যদি বিলম্ব করার কারণে শেষ পর্যন্ত হজ্ব আদায় পূর্বেই মৃত্যুবরণ করতে হয়, তার পরিণতি হবে অত্যন্ত করুণ। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তির মক্কা শরীফ যাতায়াতের মত সম্বল রয়েছে (অর্থাৎ হজ্ব ফরজ হয়ে গেছে) কিন্তু গড়িমসি করে আদায় করেনি, সে যেন ইহুদী বা খৃষ্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করে- (তিরমিযী)। অর্থাৎ সে যেন মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করার আশা না করে। ওমর (রা:) বলতেন, যাদের উপর হজ্ব ফরজ হওয়া সত্ত্বেও হজ্ব আদায় করছে না, আমার মনে চায়, তাদের উপর (অমুসলিমদের ন্যায়) জিযিরা কর আরোপ করতে। কারণ এরা মুসলিম হতে পারে না, এরা মুসলিম হতে পারে না (বাক্যটির দুইবার উচ্চারিত হয়েছে)।
আল্লাহ তা’আলা সবার উপর হজ্ব ফরজ করেননি। যাদের সামর্থ্য রয়েছে, শুধু তাদের উপরই ফরজ করেছেন। সামর্থ্য দু’ধরনের, শারীরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে। হজ্বের আহকামগুলো আদায় করার মত শারীরিক ক্ষমতা থাকতে হবে। আর অর্থনৈতিকভাবে নিজের হজ্বের সফর ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় খরচপত্র বহন এবং হজ্ব শেষে ফিরে আসা পর্যন্ত তার উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করার মত অর্থনৈতিক সঙ্গতি থাকলেই হজ্ব করা ফরজ হবে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে হজ্বের সফরে স্বামী অথবা মাহরাম সঙ্গী থাকা জরুরী। বিনা মাহরামে মহিলাদের হজ্বের সফরে বের হওয়া ঠিক নয়। ইবনে আব্বাছ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেছেন, ‘মাহরামের অনুপস্থিতিতে বেগানা নারী-পুরুষ যেন একান্তভাবে একত্রিত না হয়। কোন মহিলা যেন বিনা মাহরামে সফর না করে। তা শুনে একজন বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছে, আর আমি অমুক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়ে রেখেছি। তিনি বললেন, ‘‘তুমি গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্ব আদায় করো।’’ (বুখারী ও মুসলিম)।
হজ্বের সফরের প্রয়োজনীয় সম্বল যোগাড় করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তোমরা হজ্বের সম্বল যোগাড় করো। আর সর্বোত্তম সম্বল হচ্ছে তাকওয়া’’-(বাকারা : ১৯৭)। তাই হজ্ব করতে ইচ্ছুক সবাইকে প্রয়োজনীয় বস্তুগত প্রস্তুতির সাথে সাথে রূহানী প্রস্তুতিও গ্রহণ করা উচিত। আর রূহানী প্রস্তুতি শুরু হয় হজ্ব সংক্রান্ত ইলম হাসিল করার মাধ্যমে। হজ্ব একটি বিরাট ইবাদত। যাতে রয়েছে বহুবিধ মাসায়েল ও আহকাম। হজ্বে রওয়ানা হওয়ার অনেক আগ থেকেই সেসব জানা ও বুঝা এবং বার বার পড়া উচিত। অভিজ্ঞ আলেম থেকে এলম হাসিল করা উচিত। শুধু বই কিতাব পড়াই যথেষ্ট হবে না। ব্যবহারিক তালিমেরও প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন মসজিদে অনুষ্ঠিত এসব তা’লীমে যোগদান করা উচিত। এখন থেকেই গুনাহ থেকে তাওবা করে হজ্বের জন্য প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
পবিত্র ভূমি মক্কা ও বাইতুল্লাহর ইতিহাস হজ্ব যাত্রীদের মনে আবেগ ও অনুভূতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যে আলোচনা করতে চাই তা হচ্ছে হজ্বের ঐতিহাসিক তাৎপর্য। হজ্ব আদায়কালীন সময়ে পবিত্র ভূমিতে লুকিয়ে থাকা সেসব ঐতিহাসিক স্মৃতি ও তার সাথে জড়িত পুণ্য ব্যক্তিদের অবদানের কথা হৃদয়ে জাগরুক থাকলে হাজীর মনে সৃষ্টি হবে আল্লাহ প্রেমের অনুপম আবেগ। উজ্জীবিত হয়ে উঠবে ঈমানের স্ফুলিঙ্গ। পবিত্র ভূমিতে পা রাখার সাথে সাথেই আবেগভরে খেয়াল করা উচিত, এ কোন ভূমিতে এসেছি আমি! আমি কি সে পবিত্র ঘরকে স্বচক্ষেই দর্শন করছি, যার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে প্রতিটি দিন কমপক্ষে পাঁচ বার নামায আদায় করেছি। স্মরণ করতে হবে সে ঘরের ইতিহাস। ধূ-ধূ বালির এ মরুভূমিতে বাড়ি-ঘর তো দূরের কথা, ছিল না কোন জন মানুষের চিহ্ন। নবী ইবরাহীম (আ:) প্রিয় সহধর্মিণী পুণ্যময়ী নারী হাযেরাকে নিয়ে এলেন মক্কার এ জনমানবহীন ভূমিতে। সাথে রয়েছে দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল। তাদেরকে রেখে বিদায় হতে চললেন। হাযেরা বললেন, এ কি! আমাদেরকে এভাবে রেখে যাচ্ছেন। এটা কি আল্লাহরই নির্দেশে? তিনি বললেন, ‘অবশ্যই’।
হাযেরা বললেন, ‘তাহলে নিশ্চয়ই তিনি আমাদেরকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেবেন না’-(আল বেদায়া, ওয়ান্নেহায়া, ইব্ন কাছীর)। যেতে যেতে ইবরাহীম (আ:) প্রভূর দরবারে ফরিয়াদ করছেন, হে প্রভূ! আমি আমার পরিবার পরিজনকে এমন একটি প্রান্তরে রেখে এলাম, যেথায় নেই কোন ফসলাদির চিহ্ন, আপনার পবিত্র ঘরের কাছে, এজন্য যে, তারা যেন তথায় সালাত কায়েম করে। হে প্রভূ! লোকদের অন্তরে তাদের কাছে আসার জন্য প্রবল আবেগ ঢেলে দিন। আর তাদেরকে ফল-ফসলাদির রিযক প্রদান করুন, যাতে করে তারা আপনার শোকরগুজার হতে পারে।-(ইবরাহীম : ৩৭)
স্মরণ করুন, মা হাযেরার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। মরু হাওয়ায় দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈলের শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠ সিক্ত করতে কিভাবে সংগ্রহ করবেন একটু পানি। নিম্নভূমিতে কচি শিশুকে রেখে আরোহণ করলেন সাফা পাহাড়ের চূড়ায়। চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালেন, কোথাও নেই পানির কোন চিহ্ন। ছুটলেন আবার সামনের পাহাড়টিতে। মারওয়ার চূড়ায় উঠে চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। না, কোথাও নেই পানি। আবার সাফাতে গিয়ে আরেকটু ভালো করে দেখার চেষ্টা। আবার মারওয়াতে, একে একে সাতবার দু’পাহাড়ের মধ্যে ছুটাছুটি করেও পানির সন্ধান না পেয়ে বিফল মনোরথে ছুটে এলেন কলিজার টুকরা সন্তানটির পাশে। এসেই দেখলেন কচি শিশুর সামনেই প্রবাহিত হচ্ছে যমযমের ফোয়ারা। সে যমজম থেকেই আজকে আমরা পানি পান করছি। মহিয়ষী সে মহিলার পুণ্যময় স্মৃতি সাফা- মারওয়ার মহান রাব্বুল আলামীন।
স্মরণ করুণ, বহুদিন পর নবী ইবরাহীম (আ:) এসেছেন পরিবারকে দেখতে। উদীয়মান কিশোর ইসমাঈল কত সুন্দর হয়ে বড় হয়ে উঠছেন। পিতার মনে কত আশা। এ সন্তান তাঁর উত্তরসূরি হয়ে কত বিরাট দায়িত্ব পালন করবে। প্রভূর কাছ থেকে স্বপ্নে ইঙ্গিত এলো, কলিজার টুকরো সন্তানকে কুরবানী করে দিতে হবে। ঐশী নির্দেশ লংঘনের কোন উপায় নেই। অগত্যা ইসমাঈলকে ডেকে বললেন, ঐশী নির্দেশের কথা। সুযোগ্য সন্তান নির্ভীকচিত্তে বললেন, ‘‘হে পিতা! আপনার প্রতি প্রদত্ত নির্দেশ কার্যকরী করুন, আল্লাহ চান তো আমাকে ধৈর্য্যশীল হিসেবেই পাবেন’’-(ছাফ্ফাত : ১০২)। সে নির্দেশ কার্যকরী করতে পিতা-পুত্র মিনা প্রান্তরে গেলেন। শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’য়ালা ইবরাহীম (আ:) কে বললেন, তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন। সন্তানের পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী করার নির্দেশ দিলেন। সে কুরবানীই আজ আমরা ঈদুল আযহার দিনে আমল করে যাচ্ছি। হাজী সাহেবানরা মিনার সে প্রান্তরেই সে প্রক্রিয়ায় কুরবানী করে যাচ্ছেন।
অত:পর আসে বাইতুল্লাহ নির্মাণের ইতিহাস। পিতা-পুত্র প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করে নির্মাণ করছেন আল্লাহর ঘর। আর প্রভূর কাছে ফরিয়াদ করছেন, হে প্রভূ! আমাদের এ প্রচেষ্টা কবুল করুন। আল্লাহ কবুল করলেন এবং নির্দেশ দিলেন ইবরাহীম (আ:)কে এ পবিত্র ঘরের হজ্ব আদায়ের জন্য আহ্বান জানাতে। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজও আমরা ছুটে যাই পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে সে ঘরের দিকে।
তারপর এ ঘরকে এবং পবিত্র ভূমিকে ঘিরে রয়েছে আমাদের প্রিয় নবীর ইতিহাস। জন্ম সূত্রেই তিনি পিতৃহারা। তারপর মা হারিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইয়াতিম। দাদা এবং চাচার তত্ত্ববধানে এ মক্কার অলিগলিতেই তিনি বড় হলেন। চল্লিশ বৎসর বয়সে আল্লাহ তাঁর প্রকৃত দ্বীনের সন্ধান পেতে মক্কারই এক পাহাড়ে ধ্যানে মগ্ন থাকছেন দিনের পর দিন। সে হেরা গুহাতেই নাযিল হল (ইক্বরা ….পড়ুন আপনার প্রভূর নামে ….)।
সে থেকেই শুরু হয়ে গেল ঐশী বিধান নাযিলের ধারা। মূর্তিপূজা থেকে উদ্ধার করে তাওহীদের দিকে আনতে শুরু করে দিলেন দাওয়াতী কাজ। প্রথমে সংগোপনে, তারপর প্রকাশ্যে। জাবাল আবু কুবাইছ যা সাফা পাহাড়ের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে ডাকলেন সবাইকে। আবেগ এবং যুক্তি সহকারে দাওয়াত দিলেন। আবু জাহ্ল গং শুধু প্রত্যাখ্যানই করলো না বরং এ দাওয়াতকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে তাদের সংকল্প ঘোষণা করলো। দীর্ঘ ১৩ বৎসর মক্কা নগরীতে দাওয়াতের ফলে বেশ কিছু নর-নারী ইসলাম কবুল কররেও অধিকাংশ মক্কাবাসী শেষ পর্যন্ত ইসলামের বিরুদ্ধেই চলে গেল এবং মুসলমানদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাতে লাগল। শেষ পর্যন্ত নবী করীম (সা:) এবং সাহাবায়ে কেরাম মক্কাভূমি ত্যাগ করে হিজরত করলেন মদীনা মনোয়ারার দিকে। রাসূল (সা:) কে চূড়ান্তভাবে কতল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মক্কার কাফেরগণ যে দারুণ নাদওয়াতে বসে, পবিত্র কাবা থেকে খুব দূরে ছিল না সে মিটিং হলটি। কাফেরদের চোখে ধুলা দিয়ে নবী করীম (সা:) যে পাহাড়ের গুহায় লুকিয়েছিলেন, সে গারে ছাওর মক্কা শহরের অনতিদূরে আজও সাক্ষ্য বহন করছে, হিযরতের ইতিহাসের। মদীনা থেকে ৮ বৎসর পর পুনরায় বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করলেন তিনি তার জন্মভূমিতে।
নির্মূল করে দিলেন শিরক আর মূর্তিপূজার আখড়া বাইতুল্লাহ থেকে। তারপর হজ্ব ফরয করা হলো। তিনি হজ্ব করলেন, আমাদেরকেও হজ্বের নির্দেশ দিলেন। সে থেকে শুরু হলো এ উম্মতের হজ্ব প্রক্রিয়া, যার ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। আমি যখন মক্কা-মদীনার অলিগলিতে পদচারণ করি, তাওয়াফ করি, এমনও তো হতে পারে যে, আমার পা কোন সময় এমন জায়গায় গিয়ে পড়ছে, যেখানে নবী করমী (সা:) পা দিয়েছিলেন। এমন অনুভূতি আর ইতিহাস মনে রেখেই হজ্ব করা উচিৎ।
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্ব সমাগত। যাদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা তাওফিক দিয়েছেন তারা অনেকেই ইতিমধ্যে তালবিয়া আদায় করতে করতে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে গেছেন বা সহসাই পৌছে যাবেন। হজ্বের দিনগুলোতে হাজী সাহেবান তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, মুযদালেফা, আরাফাতে অবস্থান, মিনায় কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী ইত্যাদি বহুবিধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফযীলতের আমল সমূহে সদা ব্যস্ত থাকবেন। মূলত দুনিয়াদারীর সংশ্রব ত্যাগ করে একান্তভাবে আল্লাহমুখী হয়ে ইবাদতে মশগুল থেকে গুনাহ সমূহ মাফ করিয়ে নেয়ার সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকবেন। আর আমরা যারা হজ্বের কর্মে ব্যস্ত নই, তারা তো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। যারা হজ্ব করছেন না, তাদের জন্য কি এ পবিত্র সময়ে কিছুই নেই। আল্লাহ তা’য়ালা দয়া পরবশ হয়ে আমাদেরকে একেবারে বঞ্চিত করেননি। তিনি আমাদের জন্য কিছু সুযোগ রেখেছেন। প্রথমতঃ দশই যিলহজ্ব কুরবানীর ঈদের দিন হাজী সাহেবান যেমন কুরবানী আদায় করবেন, আমাদেরও তাদের মত কুরবানী করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের প্রতি কুরবানী করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়তঃ যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিনের আমলকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা আল ফযরের মধ্যে এ দশটি দিনের কসম করেছেন। ‘‘ওয়া লায়ালিন আশর’’ অর্থাৎ দশটি রাত বলতে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিন বুঝানো হয়েছে বলে মুফাস্সিরীনে কেরামের সম্মিলিত অভিমত। প্রিয় নবীজী (সা:) হাদীস শরীফে এদিনগুলোর ফযীলত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ দিন গুলোর আমলের ন্যায় অন্য কোন দিনের আমল আল্লাহর কাছে এত পছন্দনীয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল এমন কি আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়! তবে, যে ব্যক্তি নিজের জানমাল নিয়ে এমনভাবে জিহাদে গিয়েছে যে, আর কোনটা নিয়েই ফেরত আসেনি (এমন শাহাদাতের মর্যাদা অবশ্য সর্বোচ্চ)-বুখারী। ‘‘সেদিন আল্লাহ যত লোককে মাফ করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, তা আর কোন দিন ঘটেনা’’-মুসলিম।
এ দশটি দিনে বেশি বেশি করে নেক আমলের সুযোগ হাত ছাড়া করা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না। এ সময়গুলোতে কি কি আমল করা উচিৎ। নফল আমলের মধ্যে সর্বোচ্চ হল নফল সালাত, বিশেষ করে সালাতুত্ তাহাজ্জোদ। কুরআন তেলাওয়াত, যিকর, ইস্তেগফার, দোয়া ও দরূদ ইত্যাদি। এ সময়ে নফল রোযার আমল করা খুবই উত্তম। দশ তারিখে যেহেতু ঈদ হওয়ার কারণে রোযা রাখা হারাম। তাই সেদিনটি বাদ দিয়ে তার পূর্বের ৯টি দিন রোযা রাখার চেষ্টা করা খুবই উত্তম ইবাদত। যারা ৯ দিন রোযা রাখতে পারবেন না, তারা অন্তত ৯ই যিলহজ্ব আরাফাতের দিন এবং সম্ভব হলে তার পূর্বের দিনটির রোযা রাখার চেষ্টা করা উচিৎ। নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, “আরাফাতের দিনের রোজা গত এবং আগামী এ দু’বৎসরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়ার কারণ হয়ে যায়’’-(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)।
প্রিয় নবীজী (সা:) জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিনের রোযা (ঈদের দিন ছাড়া) রাখা কখনও ছাড়েননি’’-(আহমদ, নাসায়ী)। এ দশদিনের সর্বশেষ দিনটি কুরবানীর ঈদ। ইবরাহীম (আ:)’র কুরবানীর এ সুন্নাতকে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের ন্য জারী করে দিয়েছেন। আর তাতে আমাদের জন্য রেখেছেন নেকী অর্জনের অফুরন্ত সুযোগ। কুরবানীর এ বিশাল সওয়াবের কথা উল্লেখ করে প্রিয় নবীজী (সা:) ইরশাদ করছেন, “কুরবানীর ঈদের দিন পশু যবাই করে রক্ত প্রবাহ করার মত আর কোন আমল এত পছন্দনীয় নয় আল্লাহর কাছে। কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি সহকারে আসবে বান্দার নেকীর ওজন বাড়িয়ে দিতে। পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায় (কবুল হয়ে যায়)। কাজেই পবিত্র মনে কুরবানী করো”-(ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)।
অন্য হাদীসে তিনি বলেছেন, “প্রতিটি পশমে রয়েছে নেকী” (রিমিযী, আহমদ, ইবন মাজাহ)। এবার চিন্তা করে দেখুন, একটা পশুর কতগুলো পশম রয়েছে। দিবারাত্রি গুণতে থাকলেও কখনও গুণে শেষ করতে পারবেন নি? এত অগণিত পরিমাণ নেকী আল্লাহ দান করবেন কুরবানী করলে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে বসেন: বাংলাদেশে যেহেতু গবাদি পশু কম। তাই এতগুলো গবাদিপশু কুরবানী না করে সম পরিমাণ মূল্য গরিব মিসকিনকে দান করে দিলে হয় না? প্রথমত: শরীয়তের হুকুম যেভাবে এসেছে সেভাবে পালন করার নামই ইবাদত। শরীয়তের হুকুমে পরিবর্তন আনার কোন ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। দ্বিতীয়ত: প্রথমেই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, কুরবানীর আমলে যে সওয়াব আছে লক্ষ কোটি টাকা দান খয়রাত করেও কুরবানীর আমলের সমপর্যায়ের সওয়াব অর্জন করা যাবেনা।
যারা কুরবানী করবেন, তাদের জন্য খুবই ফযীলতের সুন্নাত আমল হচ্ছে যিলহজ্ব মাস প্রবেশ করলে শরীরের কোন পশম, দাঁড়ি, চুল, গোঁফ এবং হাত পায়ের নখ ইত্যাদি কাটবেন না-(মুসলিম)। কারো কাটতে হলে যিলহজ্ব মাস আসার আগেই কেটে নিবেন। তবে কেউ যদি আগে খেয়াল না করে থাকেন, আর যিলহজ্ব মাস এসে যায় এবং নখ, চুল, বা অনাকাংখিত পশম বেড়ে গিয়ে থাকে, কেটে নেয়া জায়েয আছে। হারাম নয়। শুধু সুন্নাতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন।
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এদিন সমস্ত হাজী সাহেবান সকাল থেকেই তালবীয়া উচ্চারণ করতে করতে আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে যাবেন। দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফে আরাফাহ বা আরাফাতে অবস্থানের সময়। সেখানে যোহর ও আসরের সালাত আদায় শেষে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে কায়মনোবাক্যে দু’আ করতে থাকবেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করছেন, “আরাফাতের দিনে আল্লাহ এত বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন যা আর কোন দিন ঘটেনা। আল্লাহ তাদের অনেক কাছে চলে আসেন এবং ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন’’-(মুসলিম)। অন্য হাদীসে এসেছে, “আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের চেয়ে আর কোন দিন এত পছন্দের নেই। আল্লাহ সেদিন দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। দুনিয়াবাসীদেরকে নিয়ে আসমানের ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, দেখ, আমার বান্দারা এলোমেলো চুল আর ধুলায় মলিন, ক্লান্ত দেহে হজ্বের উদ্দেশ্যে দূর দূরান্তের রাস্তা পাড়ি দিয়ে সমবেত হয়েছে। আমার রহমতের তামান্না করছে, অথচ আমার আযাব তারা দেখেনি। আরাফাতের ঐ দিনে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রদান করা হয়, তা আর কোন দিন ঘটেনা’’-(ইবনে হাব্বান)। তিনি আরও বলেছেন, আরাফাতের দিনে আল্লাহর অবারিত রহমতের বর্ষণ, আর বড় বড় গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়ার অবস্থা দর্শন করে শয়তান এত ভেঙ্গে পড়ে যে মর্ম যাতনায় সে একেবারে ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে যায়। ব্যর্থ, বিপর্যস্ত হয়ে ক্রোধের আগুনে জ্বলতে থাকে’’-(মুওয়াত্তা)। আরাফাতের ময়দানে এত ফযীলতের মধ্যে ডুবে থাকবেন সৌভাগ্যবান হাজী সাহেবান। কিন্তু আমরা যারা এবার হজ্ব করতে যাইনি, তাদের করণীয় আমল কি? আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকেও সুযোগ দিয়েছেন কিছু আমল করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, “আরাফাতের দিনের ১টি রোযা গত বৎসর এবং আগামী বৎসর এ দু’বৎসরের গুনাহ মাফ হওয়ার কারণ হয়ে যায়’’-(মুসলিম)। কাজেই এ দিনের রোযা রাখার সুযোগ হাত ছাড়া করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। উপরোল্লিখিত হাদীসে সগীরা গুনাহ বুঝানো হয়েছে। কবীরা গুনাহসমূহ মাফ করানোর জন্য তাওবাহ করা জরুরী। আরাফাতের দিনে যে দু’আ সর্বাধিক পরিমাণে পড়া দরকার তা হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু তা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্পে শাইয়্যিন ক্বাদীর-(তিরমিযী)।
জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে হাজী সাহেবান পবিত্র ভূমিতে হজ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ আদায় করবেন। মুযদালিফা থেকে ফযরের পর পরই মিনায় গমন করবেন। জামরাতুল আকাবাতে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। কুরবানী করবেন। মাথার চুল কাটবেন। ইহ্রাম খুলে জামা কাপড় পরবেন। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ ও ছাফা মারওয়ায় ছায়ী (সাফা-মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি) করবেন। সংখ্যার দিক থেকে হাজীদেরকে সর্বাধিক পরিমাণ কাজ দশই জিলহজ্ব করতে হয় বিধায়, এ দিনটিকেই লক্ষ্য করে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার। হাজীদের কাজে আংশিকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দিয়েছেন ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। হাজীদের অবশ্য ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব নয়। যারা হজ্ব করবেন না তাদের জন্য ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। হাজীরা মিনায় বা মক্কাতে কুরবানী করবেন। আর অন্যরা মালিকে নেছাব হলে নিজ জায়গায় কুরবানী করবেন। ইবরাহীম (আ:) স্বীয় পুত্র কলিজার টুকরা ইসমাঈল (আ:)কে আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী করার জন্য তৈরী হয়ে যেভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেন সেভাবে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে পশু কুরবানী করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এর বিনিময়ে তিনি আমাদেরকে দান করবেন বিশাল পরিমান সওয়াব। কুরবানীর পশুর গায়ে যত পশম আছে তত পরিমাণ নেকী তিনি আমাদেরকে দান করবেন। ঈদেরন দিনে কুরবানীর আমলটি আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয়। জবাই করার সময় পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়-(বুখারী, মুসলিম) কিন্তু সেটা করতে হবে পরিপূর্ণ ইখলাসের সাথে, সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। শুধু গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে বা প্রদর্শনেচ্ছার উদ্দেশ্যে করলে তা কখনো আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, কুরবানীর পশুর গোশত বা রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছেনা। আল্লাহর কাছে যা পৌঁছে তা হচ্ছে তোমাদের (অন্ত:করণে নিহিত) তাক্ওয়া-(হজ্ব : ৩৭)।
বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় বড় বড় সওদাগররা প্রদর্শনেচ্ছার উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে সর্বাধিক মূল্যে কুরবানীর গরু ক্রয় করে তারপর মালা পরিয়ে সাজিয়ে গুজিয়ে যেভাবে প্রদর্শনীর মহড়া করেন, সেটা আল্লাহর কাছে কতটুকুন কবুল হয়, সেগুলো জানারও বোধ হয় বেচারাদের কোন সুযোগ হয়নি। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের প্রতি কত এহসান করেছেন। তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত কুরবানীর গোশত খাওয়া আমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। তাই বলে স্বার্থপরের মত শুধু নিজেদের ভুরিভোজেই নয়, গরীব বা কুরবানী করতে অসমর্থদের মধ্যেও যেন গোশতের একটা পরিমাণ বিতরণ করি তা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, কুরবানীর গোশ্ত থেকে তোমরা নিজেরাও খাও এবং বিত্তহীন ও গরীবদেরও খেতে দাও। আমাদের দেশে কুরবানীর ঈদের আগে ফ্রিজ কেনার ধুম পড়ে যায়। যাতে করে গরীবদেরকে বঞ্চিত করে নিজেরা খেয়ে আগাম কয়েক মাসের জন্য মওজুদ রাখা যায়।
কুরবানীর ঈদের দিনের আরেকটি সুন্নাত আমল হচ্ছে ঈদের নামাজ পড়ার পূর্বে কিছু না খাওয়া। নবী করীম (সা:) খালি মুখে কুরবানীর ঈদের নামাজ পড়তে যেতেন। আর নামাজ পড়ে এসে কিছু খেতেন। ঈদের দিন এবং তারপর আরও তিনটি দিন যা আইয়্যামে তাশরীক হিসেবে পরিচিতি, রোজা রাখা হারাম। কুরবানর গোশ্ত সহ খাওয়া, পান করা এবং পাশাপাশি আল্লাহর যিকর ও শোকর এ মশগুল থাকার সময় এ দিনগুলো। আল্লাহর শোকর ও যিকরের জন্য প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর কমপক্ষে একবার তাকবীর পড়া ওয়াজিব, আর তিনবার পড়া সুন্নাত। ৯ জিলহজ্ব আরাফাতের দিন ফজরের নামায থেকে শুরু হয়ে ১৩ জিলহজ্ব আসরের নামায পর্যন্ত তাকবীর পড়া অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু নামাজের পরেই নয়, অন্যান্য সময়ও বেশি বেশি করে পড়া মুস্তাহাব। ঈদের দিনে বা তদোপলক্ষে যিকর আর শোকরের পরিবর্তে সিনেমা, ভিডিও দেখা বা অন্যান্য নাফরমানীর আমল থেকে নিজেরাও দূরে থাকা উচিৎ এবং পরিবারের অন্যদেরকেও দূরে রাখা উচিৎ। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে তাওফিক দিন।-আমীন।