দেশে জঙ্গিবাদের চর্চা দৃশ্যমান হয় আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। শুরুর দিকে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে এবং আরো কিছু জায়গায় বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এরপর বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটে। জঙ্গিরা সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটায় ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে।
এরপর কিছুদিন তাদের কর্মকাণ্ড স্তিমিত ছিল। আবার তারা সক্রিয় হয় ২০১৩ সালে, একটু ভিন্নভাবে। ব্যক্তিবিশেষকে টার্গেট করে চাপাতি হামলা চালাতে শুরু করে তারা। এ পর্বের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটানো হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে। ওই হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। এরপর জঙ্গি নির্মূলে সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট ও জোরালো হয়। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান’ পরিচালনা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এসব অভিযানে নিহত হয়েছেন ৬৩ জন। গত ছয় বছরে সিটিটিসি মোট ৫৫৯ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। অনলাইনে উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে আরো ৪৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এই ইউনিট। র্যাব জানাচ্ছে, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর তাদের পরিচালিত ৭৭৯টি উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে এক হাজার ৬৭৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। এ সময়ে তারা ৫৪টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে।
এত অভিযানের পর জঙ্গি তত্পরতা কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গি সংগঠনগুলো একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে তারা। অনলাইনে তারা সক্রিয় আছে। তবে তাদের ধরতে তত্পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। সিটিটিসি বলছে, যারা ট্রেনিং মডিউল শেয়ার করে তাদের অবস্থানও এখন বের করে ফেলা হচ্ছে।
ইসলামের নামে জঙ্গিদের উত্থান অনেক দিন থেকেই সারা বিশ্বে উদ্বেগের কারণ। ইসলামিক স্টেট, আল-কায়েদা, হুজি, তালেবান ইত্যাদি নামে তারা একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের এসব হামলার শিকার হয়েছে মূলত নিরীহ মানুষ। বর্তমানে জঙ্গিদের তত্পরতা কমলেও তাদের অনেকেই নানা জায়গায় ঘাপটি মেরে রয়েছে। কাজেই আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এখন আরো তৎপর হতে হবে।