প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গ্যাসের দাম বাড়ছে না

63

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এই মুহূর্তে যেন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা না হয়। এ জন্য তিনি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
কমিশন সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয়ার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছিল বিইআরসি। এজন্য রবিবার চারটায় সংবাদ সম্মেলন করারও সিদ্ধান্ত হয়। সংবাদ সম্মেলনের জন্য কমিশনের নির্ধারিত শুনানির কক্ষ পরিষ্কার করা ছাড়াও অন্য প্রস্তুতি শেষ করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আর সংবাদ সম্মেলন না করে সোম বা মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানায় কমিশন। কমিশনের সচিবের স্বাক্ষরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয়া হয়। কমিশনের সচিব রবিবার ছুটিতে থাকলেও তাকে আদেশে স্বাক্ষর করার জন্য ডেকে আনা হয়। কমিশনের জুনিয়র কয়েকজন কর্মকর্তা নির্বাচনের আগেই এ ধরনের সিদ্ধান্তে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে বলে সচিবকে জানানোর পর তিনি আদেশে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন। তিনি অফিস থেকে চলে যান বলেও কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, এলএনজি আমদানির প্রেক্ষিতে এবার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল বিতরণ কোম্পানি। সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী কমিশনে গিয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর বছরের শুরুর দিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির তৎপরতা শুরু হয়। তখন থেকেই নির্বাচনের বছর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি জনমনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। উপরন্তু যে পরিমাণ এলএনজি আসার কথা তাও আসছে না। এতে সরকারের সামান্য কিছু ভর্তুকি হলেই যেখানে চলা যায় সেখানে কমিশনের এই ভূমিকাকে বিতর্কিত হিসেবে দেখছেন অনেকে। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে আবাসিক বাণিজ্যিক ছাড়া অন্য সকলখাতের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করলেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। কমিশন এ সব বিষয় বিবেচনা না করে কেন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয়ার জন্য তৎপর ছিল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
কমিশন সূত্র বলছে, যে পরিমাণ এলএনজি চলতি বছর যুক্ত হচ্ছে তাতে সব মিলিয়ে সারা বছরে দুই হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে ১৮ আগস্ট। ফলে পুরো বছরের অর্ধেক সময় ধরে হিসেব করলে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সরকার এখাতের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। ফলে এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলাকে খুব বেশি ব্যয় করতে হবে না। এরপরও অতিরিক্ত অর্থের দরকার হলে সরকারী তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে বলে জানা গেছে।
এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ, সার কারখানা, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ার এবং শিল্প কারখানার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন, শিল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে তা প্রভাব ফেলবে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের পদক্ষেপ কোন দেশেই নেয়া হয় না। সেক্ষেত্রে কমিশন কেন এই তৎপরতা জোরেশোরে চালাল তা খতিয়ে দেখার কথাও বলছেন কেউ কেউ।
জানতে চাইলে কমিশন সচিব রেজানুর রহমান বলেন, এখন একটি আদেশ দেবে কমিশন। যে আদেশে কোম্পানিগুলোর মার্জিন বৃদ্ধির বিষয় ছাড়ও অন্য কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে কমিশন আদেশটি দেবে। পরবর্তীতে দাম বৃদ্ধি করতে হলে আবার শুনানির দরকার হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কমিশন চেয়ারম্যান এবং দু’জন সদস্যকে ফোন করা হলে তারা সাড়া দেননি।