স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি উপচে গত রবিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, মার্কেট, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে নগরবাসী জলাবদ্ধতার পাশাপাশি পড়েছেন দুর্ভোগে। গতকাল রাত পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেটে গতকাল দুপুরে কিছুটা বৃষ্টি কমলেও ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া গতকাল রাতে আবারও শুরু হয় বৃষ্টিপাত।
এদিকে, সিলেটের সুরমা নদী, কুশিয়ারা নদী ও সারি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে সুরমা নদীর তীর উপচে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে তলিয়ে যায়, নগরীর শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, ছড়ারপাড়, কাজিরবাজার, শেখঘাট, ভিআইপি রোড নামে খ্যাত তালতলা, তালতলা ফায়ার সার্ভিস অফিস, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, মার্কেট, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায়ও পানি ঢুকে পড়েছে।
নগরীর কালিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী নিলাঞ্জন দাশ টুকু বলেন, সকালে এসে দেখে নদী উপচে দোকানের সামনে পানি এসে গেছে। দুপুর গড়ানোর আগেই দোকানের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে। এখন পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহাত রয়েছে। তিনি বলেন, এতো দ্রুত পানি বাড়তে আমি আগে কখনো দেখিনি।
নগরীর সোবহানিঘাট এলাকার বাসিন্দা দেবজ্যোতি দাস বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসার ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। আমাদের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
সুরমা নদী: পাউবো সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১.২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রবিবার সন্ধ্যা ৬টার চেয়ে গতকাল সোমবার সকালে এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ০.৩ সেন্টিমিটার। সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বেড়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় সিলেট পয়েন্টে পানি ছিল ১০.৪৯ সেন্টিমিটার। সোমবার সকালে পানি সীমা দাঁড়িয়েছে ১০.৬৬ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদী: কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে গতকাল সোমবার সকালে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টেও বেড়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় এ পয়েন্টে পানি সীমা ছিল ৬.৮৩ সেন্টিমিটার; গতকাল সকাল ৯টায় পানি সীমা হয় ৬.৯৬ সেন্টিমিটার। পানি বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও। এখানে গতকাল সোমাবার সকাল ৬টায় পানি সীমা ছিল ৮.৭০ সেন্টিমিটার; সকাল ৯টায় পানি সীমা দাঁড়ায় ৮.৭৪ সেন্টিমিটার।
সারি নদী: গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি বিপদসীমার ০.৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কানাইঘাটের লোভা নদীর পানি গত রবিবারের চেয়ে বেড়েছে ০.৩৪ সেন্টিমিটার। রবিবার ছিল ১৪.৩৬ সেন্টিমিটার, গতকাল সোমবার সকালে ১৪.৬৫ সেন্টিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে কাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমান কমেছে। তবে উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, একারণে ঢল নামছে। ফলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমবার সকালে ‘ইউএনো গোয়াইনঘাট’ ফেসবুক পেজ থেকে এলাকাবাসীকে সতর্ক করে লেখেন- ‘প্রিয় গোয়াইনঘাটবাসী, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে বৃষ্টি বাড়বে। সকলকে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করার অনুরোধ করা হলো। ইতোমধ্যে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে, এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। ত্রাণের সাথে পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে, পানি পানে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
এসময়ে বজ্রপাত, পানির স্রোতে নৌকাডুবি, বাধভাঙ্গা, গাছ উপড়ে যাওয়া, সাপেকাটা সহ নানান দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনাদের সাথে সাথে নিম্নোক্ত নাম্বার সমূহে জানানোর অনুরোধ করা হলো। ০১৭৩০৩৩১০৩৬, ইউএনও, গোয়াইনঘাট, ০১৩২০১১৭৯৬৯, অফিসার ইন চার্জ, গোয়াইনঘাট থানা ০১৭৪৭০৯৭৬৫০, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, গোয়াইনঘাট, ০১৭৩০৩২৪৭৫৫, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গোয়াইনঘাট এবং সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সকলের সহযোগিতা
প্রত্যাশা করছি।’