মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে নদ-নদীর পানি কমতে কমতে তলানিতে এসে গেছে। পানির অভাবে কোথাও মিলছে না কাঙ্খিত দেশীয় মাছ। এদিকে-আবার হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ। বর্তমানে কাটা ধানের ডগায় দ্বিতীয়বার ডেম ধান হয়েছে।
জানা গেছে, জগন্নাথপুরে এবার বাম্পার বোরো ধান হয়েছে। তবে ধানে থোড় আসার পর গত এপ্রিলে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদ-নদী ভরাট হয়ে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়ে যায় হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধগুলো। এ সময় সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানিতে হাওর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জগন্নাথপুরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর সহ অন্যান্য হাওরের বাঁধ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পিআইসি কমিটি ও স্থানীয় কৃষক-শ্রমিক জনতা। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিকরাও বসে ছিলেন না। তাৎক্ষনিক দ্রুত সংবাদ কাভারের পাশাপাশি অনেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় কাজ করতে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের উৎসাহিত করেছেন। বাঁধে ফাটল দেখা দিলেই স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকিং করা হতো। তখন স্থানীয় লোকজন টুকরি-কোদাল কাঁদে নিয়ে দৌড়ে ছুটে যেতেন এবং স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে মাটি কাটতেন। এভাবে টানা প্রায় দুই সপ্তাহ দিনরাত কাজ করা হয়েছে। এ সময় জমিতে থাকা ধান কাটতে পারবেন কি না এমন আতঙ্কে সারাক্ষণ আশা-নিরাশার মধ্যে কাটিয়েছেন কৃষকরা। ফলশ্রুতিতে সকলের প্রাণপন প্রচেষ্টায় বড় বড় হাওর রক্ষা হয়েছে। তবে নলজুর নদী সহ বিভিন্ন নদীর পানি উপচে উঠে বাঁধ ও রাস্তার উপর দিয়ে ছোট ৬টি হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এতে কমবেশি ক্ষতি হয়েছে।
অবশেষে এপ্রিলের শেষপ্রান্তে এসে বাম্পার বোরো ধান কৃষকদের গোলায় উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে অনেকে জানান, গত সপ্তাহ ১০ দিন আগে ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তবে এখনো উচুঁ স্থানে থাকা অল্প কিছু জমিতে মনের আনন্দে ধান কাটছেন কৃষকরা। ৭ মে শনিবার নলুয়ার হাওর পাড়ের স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে অনেকে জানান, হায়রে সর্বনাশা পানি, আমাদের কষ্ট দিয়েছে। এখন মাছ ধরার মতো পানি নেই কোথাও। বর্তমানে জমিতে দ্বিতীয়বার ডেম ধান হয়েছে। যারা ভাগ্যবান তারা ডেম ধান কাটছেন। অনেকে আবার ধান কাটার অপেক্ষায় আছেন। জমির ডেম ধান পাকলে কাটবেন। তারা আরো জানান, যে জমিতে গরু চড়ানো হয়েছে, সেই জমি নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে ডেম ধান হবে না। যে জমিতে গরু যায়নি, শুধু সেই জমিতে ডেম ধান হয়েছে। তাই ডেম ধান কাটার ভাগ্য সবার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, জমির ধান কাটা শেষ হওয়ার পর, কাটা ধানের ডগা থেকে দ্বিতীয়বার ধান হয়। এসব ধানকে স্থানীয় ভাষায় ডেম ধান বলা হয়। এসব ধানের ফলন কম হলেও ভালো হয়।