কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ মাহে রমজানের ২৫তম দিবস। আগামীকাল সে কাক্সিক্ষত দিবস, যার দিনের অবসানে রয়েছে পবিত্র কুরআন নাজিলের স্মৃতি বিজড়িত হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রজনী। তাই আজ এখানে আমরা এ মহাগ্রন্থের মর্যাদা সম্পর্কে জানব এবং এর তিলাওয়াতের উপকারিতা ও আদব সম্পর্কে অবহিত হবো। আল্লাহ তায়ালার পাক কালাম পবিত্র কুরআন মজীদ ‘মুমিন মুসলমানের সবচে’ পবিত্রতম গ্রন্থ।
কুরআন শব্দটি আরবী ‘কারউন’ ধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ পড়া, তিলাওয়াত করা ও আবৃত্তি করা। পৃথিবীর সর্বোত্তম ধর্মীয় পাঠযোগ্য গ্রন্থ এই কুরআন। এর পূর্বের অন্য রসূলগণের (আঃ) অবতীর্ণ আসমানী গ্রন্থ সমূহের সারসংক্ষেপ হচ্ছে এই কুরআন। এর অপর নাম ‘আল ফোরকান’ তথা সত্য-মিথ্যা প্রভেদকারী। এতে সর্বপ্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের রহস্যাবলী সন্নিবেশিত আছে বলে একে আল্ হাকীম বা ‘জ্ঞান ভান্ডার’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়।
ইসলামী কানুন বিশারদগণের ভাষায় ঃ পবিত্র কুরআন হচ্ছে- যা আঁ- হযরতের ওপর অবতীর্ণ, গ্রন্থাকারে সুবিন্যাস্ত এবং যা সন্দেহাতীতভাবে, মহানবী (সা.) থেকে অসংখ্য আগমন মানবসূত্র দ্বারা সংগৃহীত। আর কুরআন বলতে এর বাহ্যিক পাঠ এবং অন্তর্নিহিত অর্থ সবই বুঝায়।’ (দ্রঃ পৃ. ৪২৬- কাওয়াঈদুল ফিকাহ, করাচী)। পবিত্র কুরআন মজীদ বিশ্বমানুষের ইহকাল ও পরকালের সামগ্রিক কল্যাণের ধারক ও বাহক। ইসলামী শরীয়তের উৎস হিসেবে কুরআন সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান ভিত্তি। মহানবী (সা.) আগমনের পূর্বে অনুষ্ঠিত ও সংঘটিত অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনা এ মহাগ্রন্থে বিবৃত হয়েছে। ঐতিহাসিক ও গবেষকদের জন্য এটি বহু তথ্যের উৎস। কুরআনের দ্বারা বিশ্বজগতও সৃষ্টি বৈচিত্রের বৈজ্ঞানিক সত্য উদঘাটিত হয়েছে। এতে যে সব বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক তত্ত্ব এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে তা এখনও পৃথিবীতে অতুলনীয়। এতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন, বিবাহ ও উত্তরাধিকার আইনেরও সুন্দর আলোচনা রয়েছে।
মোট কথা কুরআনে যা কিছু আছে তা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। এছাড়া এর ভাষার লালিত্য, অলঙ্কার ও বচনভঙ্গি অপূর্ব ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অসংখ্য, ভুবনখ্যাত জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তি এর ভাষা অলঙ্কার, উপমা, ছন্দ ও রচনাশৈলীতে গভীরভাবে মুগ্ধ হন। বহু ভাষাবিদ হতবাক হয়ে পড়েছেন এর আঙ্গিক সৌন্দর্যে ও আভ্যন্তরীণ সুষমায়। এমনকি যারা কুরআনের অর্থ বোঝেন না, তারাও এর মধুর শব্দ ঝঙ্কারে ও ভাষার লালিত্যে সদা সর্বদা কুরআন পাঠ করেন ও সাওয়াব হাসিল করেন। এর সাহিত্যিক মূল্যায়ন সম্পর্কে একজন ফরাসী পন্ডিত বলেন, কুরআন বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিজ্ঞান সংস্থা, ভাষাবিদদের জন্য এক শব্দ কোষ, বৈয়াকরণের জন্য এক ব্যাকরণ গ্রন্থ এবং বিধানের জন্য একটি বিশ্বকোষ।’
এ পবিত্র গ্রন্থ লওহে মাহফুজ নামক স্থানে সংরক্ষিত ছিল। সেখান থেকে রমজান মাসের লাইলাতুল ক্বদরে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছিল। সেখান থেকে পরবর্তীকালে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) এর মারফত প্রকাশ্য ওহীযোগে মহানবী (সা.) নবী জীবনের দীর্ঘ ২৩ বছর মানবজাতির প্রয়োজনের তাগিদে অবস্থা ও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কুরআনের আয়াত ও সূরাগুলোর অবতরণ সম্পূর্ণ হয়। সূরা দুখানের ৫৮নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় এটি আমি আপনার ভাষায় অবতীর্ণ করে সহজ করে দিয়েছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ সূরা ইউসুফের প্রথমদিকে এসেছে ঃ আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।’
কোন গ্রন্থেই গ্রন্থকার কোনদিন গ্রন্থের নির্ভুলতা ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয় না। কিন্তু আল কুরআনের একেবারে শুরুর দিকে মহান আল্লাহ এ পবিত্র গ্রন্থের ব্যাপারে গ্যারান্টি বাণী উচ্চারণ করেছেন ঃ এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটি পথ প্রদর্শনকারী পরহিজগারদের (২:২)। তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সঙ্গে যা, সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের।
এবার পবিত্র কুরআন পড়ার বা তিলাওয়াত করার আদব বা শিষ্টাচার সম্পর্কে দু’চার কথা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি যে নিজে কুরআন শরীফ শেখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। (আহমদ, তিরমিজী)। তিনি আরও বলেছেন, কিয়ামতের দিন কুরআনের ধারক বাহককে বলা হবে পড়তে থাকো এবং ক্রমাগত উচ্চাসন লাভ করতে থাকো। ধীরে ধীরে সুন্দররূপে পড়-যেরূপ দুনিয়াতে পড়তে। অনন্তর যে আয়াতে তোমার পড়া শেষ হবে সেখানেই তোমার মর্যাদাপূর্ণ আসনÑ।’ (দারেমী)।
মহানবী (সা.) এ মন্তব্যও করেছেন যে, যার অন্তরে কুরআন শরীফের কিছুমাত্র নেই, সে জনহীন উজাড় ঘরের মতো। যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের একটি অক্ষর পাঠ করবে সে একটি নেকী প্রাপ্ত হবে আর প্রতিটি নেকী দশগুণে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে। যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পাঠ করে তা মনে রাখে এবং এতে বর্ণিত হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম জানে আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশতে দাখিল করবেন, তার পরিবার বর্গের এমন দশ ব্যক্তির জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে যাদের জন্য দোযখ অবধারিত ছিল। (ইবনে মাজাহ, দারেমী)।