দেশে করোনাসহ অন্যান্য রোগের টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই লক্ষ্যে শর্ত সাপেক্ষে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হচ্ছে মাইক্রো বায়োলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, টেকনিশিয়ানসহ ২০ বিশেষজ্ঞকে। শর্ত হচ্ছে, প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসে বিশেষজ্ঞদের গোপালগঞ্জে এ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ভ্যাকসিন প্লান্টে যোগদান করে টানা ১০ বছর কাজ করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা, গবেষণার সুযোগ-সুবিধার অপর্যাপ্ততাসহ নানা কারণে অনেকে উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষাসহ গবেষণার কাজে গিয়ে আর ফিরে আসতে চান না। অথচ তারা দেশেরই সম্পদ। তাদের প্রতি যে খরচ হয় সেটা দেশেরই ইনভেস্টমেন্ট। দেশের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বে¡ও, উন্নত দেশের গবেষণা, প্রযুক্তি আর স্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজস্ব মেধা দিয়ে যেসব দেশকে শক্তিশালী করে তোলেন সেই যোগ্যতা দেশের যেসব সেক্টরে গবেষণার অনুকূল পরিবেশ আছে, সেখানে কাজে লাগানো সম্ভব। প্রয়োজন শুধু নিজের স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারীভাবে বিভিন্ন রোগের টিকা উৎপাদনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ থেকে বড় পরিমাণ (বাল্ক) টিকা এনে তা ছোট ছোট বোতলে ভরা হবে। আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিদেশী টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং প্রয়োজনে মানবদেহে পরীক্ষার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) মাধ্যমে দেশেই টিকা উৎপাদন করা হবে। এসব কাজ শেষ হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। চীনে তৈরি সিনোফার্মের টিকা দেশে উৎপাদনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৬ আগষ্ট চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই টিকাও দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংস্থাটি।
স্বাধীনতার সময় দেশের ওষুধ শিল্প ছিল অবিকশিত একটি খাত। সে সময় ওষুধের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশই পূরণ হতো আমদানির মাধ্যমে। ব্যয় হতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া স্থানীয় কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন করতে পারে এক সময় এ কথা অনেক চিকিৎসকও বিশ্বাস করতে চাইতেন না। কিন্তু বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এখন প্রায় স্বনির্ভর। কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ কোম্পানি রয়েছে দেশে। চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ তৈরি হয় দেশেই। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে, যা দেশের অনেক বড় একটি অর্জন। সরকার যখন একটি শোভন পরিবেশ তৈরি করে দেয়, তখন একটি শিল্প বিকাশের বিপুল সম্ভাবনাও তৈরি হয়। বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ প্রতিষেধক টিকাসহ অন্যান্য রোগের টিকা তৈরির উদ্যোগও অবশ্যই প্রশংসনীয়।