কাজিরবাজার ডেস্ক :
জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সময় বেঁধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সম্মেলনে কোনো কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পরে ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। তা না হলে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শাতে হবে। কী কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারছেন না- তা বিস্তারিত জানিয়ে একটা দরখাস্ত কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল (আজ) অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিলে পাশ হলে বিষয়টি গঠনতন্ত্রে যুক্ত হবে। সূত্র জানায়, ৪৫ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারলে এবং জবাব সন্তোষজনক না হলে কমিটি বিলুপ্ত করা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে এ নিয়ে চ‚ড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে। সন্ধ্যা ৬টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। প্রথমেই সূচনা বক্তব্য রাখেন দলীয় সভাপতি। পরে শুরু হয় মূল আলোচনা সভা। চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সূত্র জানায়, সভায় দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাবনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রস্তাবনায় আসা বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রতিটি প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে এবার গঠনতন্ত্রে খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে বর্তমান গঠনতন্ত্রের বেশ কিছু ভুল বানান ঠিক করাসহ বেশ কিছু সংশোধনীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রস্তাবনায় আসা মহিলা শ্রমিক লীগকে ভাতৃপ্রতিম সংগঠন করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রসঙ্গটি আলোচনায় তোলেন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ। এ সময় সংগঠনটিকে ভাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে চ‚ড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে স্বীকৃত না পেলেও তারা নিজেদের গঠনতন্ত্র মেনে ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের মতোই আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। সভায় কাউন্সিলের আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা দলীয় সভাপতিকে অবহিত করা হয়। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট সভায় তুলে ধরেন। এ সময় তারা গত তিন বছরে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে কে কয়টি জেলা-উপজেলার সম্মেলন করেছেন, কতটি করতে পারেননি। কতটির কমিটি পূর্ণঙ্গ করতে পেরেছেন, কমিটির পারেননি, তার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
একটি সূত্র জানায়, সভায় দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাজের প্রশংসা করেছেন। করোনাসহ এই তিন বছরে বিভিন্ন সংকটে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় ধন্যবাদ জানান দলীয় সভাপতি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। যেকোনো সংকটে আওয়ামী লীগই সবার পাশে দাঁড়ায়। আমি এজন্য নেতাকর্মী সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’। সভায় দলীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। রীতি অনুযায়ী আলোচনা শেষে কার্যনির্বাহী সংসদের এই বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরুর পূর্বমুহ‚র্ত পর্যন্ত বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক মুলতবি থাকবে। তবে এর মধ্যে প্রয়োজনে যেকোনো সময় মুলতবি সভা ডাকতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
জয়কে আ.লীগের সম্মেলনে আমন্ত্রণ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শুরুর আগে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সময় ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মশিউর রহমান হুমায়ুন, একান্ত সহকারী (২) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু উপস্থিত ছিলেন।