মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান :
(পূর্ব প্রকাশেরর পর)
১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারের সন্ত্রাসী ঘটনার পরে আমেরিকার মুসলমানদের উপর শুরু হয় মারাত্মক ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব। রামাদ্বান মাসে হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টি প্রথম শুরু করছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এটা বর্তমানে একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর প্রেসিডেন্ট রামাদ্বান মাসে হোয়াইট হাউসে ৫৩টি দেশের মুসলিম প্রতিনিধিদেরকে আমন্ত্রণ করে ইফতার পার্টি আয়োজন করেন। অনেক অমুসলিম এই মহাপবিত্র বরকতময় মাসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হচ্ছেন। এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর অনুগ্রহে ক্রমশই আমেরিকানগণ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। বর্তমানে মুসলমানদের অবস্থান আমেরিকাতে তৃতীয় স্থান। অনেক গবেষক মনে করেন অচিরেই তা দ্বিতীয় স্থান দখল করবে ইনশাআল্লাহ।
কানাডা : উত্তর আমেরিকার সম্পদশালী দেশ কানাডায় উল্লেখযোগ্য মুসলমান বসবাস করেন। বিগত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য এদেশের মুসলমানদেরকেও সহ্য করতে হয়েছে বর্ণ বৈষম্য। রাজধানী অটোরায় সর্বাধিক মুসলমান বসবাস করে, সংখ্যা প্রায় ষাট হাজার অটোয়া ছাড়াও সাসকেচুয়ান, অল্টারিও, সিনেটোবা, টরেন্টো, কুইবেক রাজ্যগুলোতে মুসলমানগণ বসবাস করেন। রামাদ্বানে ইফতার পার্টির আয়োজন চলে মহাসমারোহে এবং প্রতি শনিবার অটোয়া ইসলামিক সেন্টারের ইফতার পার্টিতে দেশ বিদেশের অসংখ্য মুসলমান হাজির হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীয়দের জন্য ‘দ্যা মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইফতার পার্টির আয়োজন করে। ইফতারীতে খেজু, খোরমা, পনির, সালাদ, ফল, সুপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি ইত্যাদি থাকে।
ইতালী : ইউরোপ মহাদেশের শেষ প্রান্তে এবং আটলান্টিক মহাসাগরের কিনারায় অবস্থিত ইতালী দেশটির শিক্ষিতের হার ৯৮%। দেশটির অধিকাংশ অধিবাসী ক্যাথলিক খৃষ্টান, তাছাড়া বৌদ্ধ ও ইহুদী আছে। সমগ্র জনসংখ্যার ১% হলো মুসলমান। এই অল্পসংখ্যক মুসলমান রামাদ্বানকে ঘটা করে স্বাগত জানায়। ইফতারীতে তারা বার্গার জাতীয় খাদ্য, নানাবিধ ফল যেমন- মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর, বিভিন্ন ফলের রস খান। সেহরীতে বার্গার ও বার্গার জাতীয় খাদ্য বেশী পছন্দ করে থাকে। ইতালীর রাজধানী রোম। পবিত্র কুরআনে সূরা রোম নামে ৩০ নম্বরে একটি স্বতন্ত্র ৬০ আয়াত বিশিষ্ট সূরা নাযিল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনে রোমক ও পারস্যিকদের মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধের কাহিনী উক্ত সূরায় বর্ণিত হয়েছে। বর্তমানে রোমকে বলা হয় নীরব শহর, শান্তির শহর, সাত পাহাড়ের শহর এবং পোপের শহর।
জার্মানী : অর্থনৈতিক ভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত দেশ জার্মানী। এখানে প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান যাদের বেশীরভাগ শ্রমিক এবং তারা বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে এসেছে। বর্তমানে এদেশে দু’হাজার মসজিদ আছে। শীত মৌসুমে এখানে সূর্য উঠে সকাল ৮টায় এবং সূর্য ডুবে বিকাল ৪টায়। তাই কাজের মধ্যেই ইফতারীর সময় হয়ে যায়। বড় বড় প্রতিষ্ঠান সমূহে মুসলমান শ্রমিকদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। রামাদ্বান মাসে এখানকার মুসলমানদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। একদিকে বাড়তি শিফটের কাজ অন্যদিকে ইফতারী ও সেহরীর আয়োজন এবং ইবাদত বন্দেগী করা।
সুদান : আফ্রিকা মহাদেশের বড় একটি মুসলিম দেশ হলো সুদান, যার রাজধানীর নাম হচ্ছে খার্তুম। এখানে ইফতারী সাধারণত: খেজুর দিয়ে শুরু করা হয়, এটা অবশ্য রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। তাছাড়া ‘হামড়া’ ‘লাহমা’ নামক মাংস দিয়ে তৈরী খাদ্য খেয়ে থাকে। চালের তৈরী ‘আছিদা’ এক ধরনের পিঠা তারা খায়। মাংস ও সস দিয়ে তৈরী ‘মুলাহ’ নামক খাদ্যও ইফতারীতে খায় এবং এসঙ্গে ‘গাওয়া’ নামক চা জাতীয় পানীয় তারা পান করেন। সুদানীরা ‘শোরবা’ নামক সুপ, মাংস দিয়ে তৈরী ‘মুহাম্মার’ নামক খাবার, দুধ ভাত দিয়ে তৈরী ‘রুসবিল হালিব’ সালাদ দিয়ে খায়। তদুপরি পায়েশ, খির, ফিরনী এগুলো তৃপ্তির সাথে খেয়ে থাকেন। মারাদ্বান শেষে সরকারী ভাবে সুদানে ঈদ পালন করা হয়।
মিশর : আফ্রিকার মুসলি প্রধান তুর পর্বত ও পিরামিডের দেশ হচ্ছে মিশর। বিশ্বের প্রাচীনতম আল-আযহাব বিশ্ববিদ্যালয় ৯৭৩ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়। রামাদ্বান মাস এলে অফিসের কর্ম ঘন্টা কমানো হয় যাতে সিয়াম পালনকারীগণ মসজিদে ইবাদতে পর্যাপ্ত সময় পান। দলবেঁধে তারা মসজিদের দিকে ছুটে এবং আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে চারদিক প্রকল্পিত করে। দিনের কাজকর্ম করে তারা রাতে কিয়ামুল লাইল, তারাবী এবং কুরআন তেলাওয়াত করে কাটিয়ে দেন। যোহরের সালাতের পর থেকে ‘বাজারের শহর’ নামে খ্যাত রাজধানী কায়রো শহরের অলিগলিতে ঢাকার চকবাজারের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে হরেক রকম ইফতারের আয়োজন। ইফতারে ঐত্যিবাহী পানীয় ‘শরবত কামার আল দীন’ সব বয়সীরা পান করে থাকে। মরুভূমির এই দেশে ইফতারীতে খেয়ে থাকে ‘কানাফা’ নামক পিঠা যা আটা, বাদাম, মধু, কিসমিস ও চিনি দিয় তৈরী করা হয়। আরেক ধরনের গোলাকার ছোট পিঠা ‘তায়েফ’ তাতে বাদাম ও কিসমিস বেশী থাকে তাও খেয়ে থাকেন। মিশরীয় শিশুদের কাছে রামাদ্বান মাসটি সবচেয়ে বেশি আনন্দময়। তারা এ সময় আমাদের দেশের বাচ্চাদের মত পিতামার কাছে সিয়াম রাখার জন্য দাবী জানায়। মিশরের মুসলমানগণ ইফতার করেন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায়। ফলে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়ে উঠে। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই ইফতার করেন ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, হোটেল প্রভৃতিতে। তাই রামাদ্বান মাসে পাঁচতারা হোটেল ও অন্যান্য রেস্তোরাঁগুলোতে অ্যারাবিয়ান ডেকোরেশনে তাবু সাজিয়ে ঐতিহ্যবাহী ইফতারী পরিবেশন হয়। মিশরে কিছুসংখ্যক খৃষ্টান বসবাস করেন। তারা রামাযান মাসের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে প্রকাশ্যে ধূমপান ও খাদ্য গ্রহণ করেন না। অকে উদারপন্থি খৃষ্টান জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে এ মাসে উপবাস করেন।
আলজেরিয়া : উত্তর আফ্রিকার একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হলো আলজেরিয়া। রৌপ্যের শহর নামে খ্যাত আলজিয়ার্স হচ্ছে এর রাজধানী। দেশটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মেডিটারিয়ানের তীরে অবস্থিত। এখানে বয়স্কদের মাঝে বেশী ধর্মীয় মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। ইফতারীতে এরা শাকসবজি ও মুরগীর মাংস দিয়ে তৈরী পিজা ‘সোয়ারবা’ সবজির রোলস, আলু ও সবজির তৈরী ‘দোলমা’ খেয়ে থাকে। আলজেরিয়ার মুসলমানগণ কিয়ামুল লাইল তারাবীর সালাতের পর ‘সিগার’ নামক কাচা কাঠ বাদামের তৈরী শরবত পান করে থাকেন। সেহরীতে এরা হালকা খাবার যেমন ফলের রস, দুধ, কফি ইত্যাদি খান। এদেশে রামাদ্বান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ পূর্বে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
লিবিয়া : আফ্রিকার আরেকটি মুসলিম দেশ হচ্ছে লিবিয়া যার রাজধানীর নাম হলো ত্রিপোলী। রামাদ্বান মাসকে এরা পূর্ব থেকে খুব আনন্দ ও গুরুত্বের সাথে অভিনন্দন জানায়। ছোট বড় সবাই সিয়াম রাখার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। ইফতারীতে এখানকার মুসলমানগণ খেজু, কাঁচা কাঠবাদামের শরবত, কলা, আঙ্গুর, বেদানা, নাশপাতি, ময়দা ও আটার রুটি (খুবজা) খেয়ে থাকেন। সেহরীতে এরা খুবজা, তেলেভাজা ভাত, দুম্বার মাংস, সবজি, দুধ, দই, ফল ইত্যাদি খায়।
ইয়েমেন : ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ আরব দেশটি হলো ইয়েমেন। এখানে রামাদ্বান মাস এলে সিয়াম ও ইবাদতের জন্য সবাই প্রস্তুত হয়ে যায়। ইফতারীতে এরা খেজুর, খোরমা, ফলের জুস, সোরবা নামক সুপ, দুধ ও দই মিশ্রিত নরম ময়দার রুটি সম্বলিত খাদ্য ‘সাফুত’ সামুছা জাতীয় খাবার ‘সামবুছা’ বিরিয়ানী, সালাদ, কাবাব জাতীয় খাদ্য ‘বেজিন’ ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। তাছাড়া লেবুর শরবত এবং মিষ্টি জাতীয় নানাবিধ খাবার ইয়েমেনীরা খায়। কিয়ামুল লাইল তারাবী সালাতের পরে এরা ভাত, মাংস ও সবজি মিশ্রিত খাদ্য ‘কাবছা’ খেয়ে থাকেন। রুটি, দুধ ও খেজুর মিশ্রিত তৈরী ‘ফাও’ নামক খাবারও এরা খায়। সেহরীতে সাধারণত; ইয়েমেনীরা ফল, জুস, চা, কফি প্রভৃতি হালকা খাদ্য গ্রহণ করেন।
প্যালেষ্টাইন : বিশ্বের মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান হলো প্যালেষ্টাইন। মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মাসজিদুল আকসা’ এখানেই অবস্থিত। এই মাসজিদকে ‘আল-কুদ্স’ও বলা হয়। আল কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈল প্রথম আয়াতে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা ঘোষণা করেন, “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদের হারাম থেকে মাসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’। এদেশে ইফতারে প্রথমে খেজুর দিয়ে শুরু হয়। তারপর বিভিন্ন ধরনের সুপ, এরপর ভাতের সাথে ফুলকপি ও মটরশুটি দিয়ে তৈরী মুরগীর মাংস খায়। তাছাড়া ভাত, মাংস ও শাক-সবজি মিশ্রিত খাবার ‘মাকবুলা’ তৃপ্তির সাথে তারা খায়। বিভিন্ন পাতার আরক সস এবং নাবাধি ফল ফলাদির জুস এরা খেয়ে থাকে। তবে রামাদ্বান মাসের জন্য স্পেশাল তৈরী ‘কামারিদ্দীন’ নামক জুস তারা পছন্দ করে। সেহরীতে এরা হালকা পানীয় পাস করে থাকেন। পনির ও দই জাতীয় খাবার ‘লাবান’ মিষ্টিদ্রব্য, চা ইত্যাদি সাহরীতে খায়। প্যালেষ্টাইনীরা খুব ঘটা করে এবং আনন্দের সাথে ঈদ উৎযাপন করে থাকে।
অস্ট্রেলিয়া : খৃষ্টান অধ্যুষিত দেশটিতে সবাই শিক্ষিত। মোট জনসংখ্যার ২% হলো মুসলমান। এখানকার মুসলমানগণ ইফতারীতে স্যান্ডউইচ, পনির, মাখন, দুধ জাতীয় খাবার, নানাবিধ ফল ও ফলের রস খেয়ে থাকে। সেহরীতে বার্গার খেয়ে তারা সিয়াম রাখেন। অমুসলিম দেশটিতে রামাদ্বান মাসের ধর্মীয় পরিবেশ থাকার কথা নয়। সিয়াম ও ঈদ উপলক্ষে সরকারী সুযোগ সুবিধার প্রশ্নই উঠে না। তবে এ সময় এখানকার মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং মজবুত হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া : এশিয়া মহাদেশের চীন ও জাপানের মধ্যস্থানে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়া দেশটির রাজধানী হলো সিউল। দেশটিতে বেশীরভাগ অধিবাসী হচ্ছে খৃষ্টান ও বৌদ্ধ। মোট জনসংখ্যার ৩% হলো মুসলমান। ইফতারীতে এখানকার মুসলমানগণ নুডলস, সুপ, ফলের রস, বিভিন্ন প্রকারের ফলফলাদি খেয়ে থাকেন। সেহরীতে মাংস ও রুটি তারা খায়। অমুসলিম দেশ হলেও ঈদের দিন মাত্র দু’ঘন্টা ছুটি দেন সেখানকার সরকার বাহাদুর।
পাকিস্তান : দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ হলো পাকিস্তান, যার ৯৭% অধিবাসী হচ্ছে মুসলমান। বাকী ৩% হলো খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য সম্প্রদায়। পাকিস্তানীরা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রামাদ্বান মাসকে স্বাগত জানায় এবং যথাযথ ভাবে পালন করে। এ মাসে অফিস, আদালত, ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে নতুন সময়সূচী বেঁেধ দেয়া হয়। দিনের বেলায় হোটেল রেস্তোরা সমূহ বন্ধ থাকে তবে ইফতারীর পূর্বে খোলা হয়। পাকিস্তানীরা সচরাচর পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে ইফতারী করে থাকেন। ইফতারীতে থাকে খেজুর, খোরমা ও শরবত। অনেকেই হামদর্দ এর ঐতিহ্যবাহী শরবতে ‘রূহ আফজা’ দুধ বা পানির সাথে মিশিয়ে পান করেন। তাছাড়া খেজুর, দুধ ও নুডলসের সমন্বয়ে তৈরী ‘শির-খুরমা’ জাতীয় মুখরোচক খাবার ইফতারীতে তারা খায়। সেহরীতে মসলাযুক্ত খাবারই তারা খেয়ে থাকেন। সাধারণত: তরকারীতে তারা পিয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, লবঙ্গ, এলাচি, মরিচ ইত্যাদি বেশী ব্যবহার করেন। ধনীদের অনেকেই উমরাহ করার জন্যে রামাদ্বান মাসে মক্কায় যেয়ে থাকেন। গত বছর মুসলমানদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে পাকিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত উয়েনডি চেম্বারলিন উপবাস করেছিলেন। ঈদ উপলক্ষে পাকিস্তানের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী উৎসব বোনাস পেয়ে থাকেন। ঈদের পূর্বেই ফেতরা আদায় করে থাকে এবং রামাদ্বান মাসেই যাকাত দিতে থাকে। ঈদ উপলক্ষে মেলার আয়োজন হয় এবং শিশু কিশোররা এতে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে সুপরিচিত বাংলাদেশটিতেও রামাদ্বানে বেশ সাড়া জাগে। এ দেশের বেশীরভাগ মুসলমানগণ রোযা রাখেন। যারা রোযা রাখে না তারাও মজাদার ইফতারী খেয়ে থাকে। বাংলাদেশীরা বরাবর ভূড়ি ভোজনে অগ্রগামী। তাই ইফতারীতে নানাবিধ মুখরোচক খাবারের বাহারের আয়োজন চলে। গ্রামে ও শহরে ইফতারীর আয়োজনের একটু পার্থক্য বিদ্যমান। শহরে সাধারণত: খেজুর, হালিম, ছোলা, পিঁয়াজু, বেগুনি, পাকুড়া, জিলাপি, মুড়ি, পরোটা, বিফ বুনা, আলুর চপ, চটপটি, পাটিসাপটা পিঠা, চিকেন রোলস, দইবড়া, লাচ্ছি সহ আরও কত কি। ছাড়াও শরবত এবং নানাবিধ ফল ও ফলের রসের সমাহার কিছুই বাদ নেই। বাংলাদেশের ফাইভ স্টার হোটেলে প্রায় পঞ্চাশ আইটেমের ইফতারীর সাথে প্রায় তের রকমের সালাদের আয়োজন চলে। পল্লী এলাকায় মুড়ি, ছোলা, পিঁয়াজু, ফল, তরকারী, ভাত ইত্যাদি দিয়ে ইফতারী পর্ব শেষ করা হয়। অনেকেই শরবত এবং ফলের রসও তৃপ্তির সাথে খায়। সেহরীতে আমাদের দেশে শহর ও গ্রামে প্রায় একই রকম খাদ্য। সাধারণত: ভাত, মাছ অথবা মাংসের তরকারী, ডাল, দুধকলা। শহরে অনেকেই সেহরীতে রুটি কিংবা পরোটা মাংস দিয়ে খেয়ে থাকেন। গ্রামে অনেকে সেহরীতে ঘি-ভাত-চিনি-কলা মিশ্রিত সুসাধু খাবার তৃপ্তির সাথে খায়।
বাংলাদেশে ঈদ খুব ঘটা করে এবং উৎসবের আমেজের মধ্যে উৎযাপিত করা হয়। চাকুরীজীবিরা উভয় ঈদে উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন বিধায় ঈদ উদযাপনের সুবিধা হয়েছে। তাছাড়া কমপক্ষে তিন দিন সরকারী ছুটি থাকে বলে সবাই আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের নিকট দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ পায়। রাজনীতিবিদগণ ভালোভাবে গণসংযোগ করতে পারে এই ঈদ উপলক্ষে। (অসমাপ্ত)