আইনের কঠোর প্রয়োগ

7

খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। সঙ্কটের কারণে পণ্যের দাম বাড়ে এবং ক্রেতাদের পকেট কেটে লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা। অবৈধ এই মজুদের প্রক্রিয়া বহু প্রাচীন। মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে ধর্মেও অবৈধ মজুদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী। এই সমাজেও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা না করে নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। সরকারের হুঁশিয়ারি, বাজার মনিটরিং এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দিয়েও এদের দমানো যায়নি। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী জোট করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়েই চলেছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এবার কঠোর হয়েছে সরকার। এদের দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রী সভায় অনুমোদন দেয়া হয় এই নতুন আইনের।
অনুমোদিত আইন অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্য অবৈধভাবে মজুদ করা হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ‘খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২২’ শিরোনামের এই আইনের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। এর মাধ্যমে অবৈধ মজুদ বন্ধ করে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করা হবে। নিশ্চিত করা হবে বাজারের স্থিতিশীলতার মান। কেউ যাতে অনৈতিক কাজ করতে না পারে, খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে যাতে কোন অপরাধ সংঘটিত না হয় সেদিকে নিয়মিত নজর দেয়া হবে। নিরাপদ খাদ্য আদালত আইনটি প্রয়োগ করবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টেও বিচার হতে পারে।
আগে কোন খাদ্যদ্রব্য জব্দ করা হলে এগুলো নষ্ট হয়ে যেত কিংবা নষ্ট করে ফেলা হতো। এতে বিনষ্ট হতো জাতীয় সম্পদ। নতুন আইনে জব্দকৃত কোন খাদ্যদ্রব্য তাৎক্ষণিকভাবে নিলাম ডেকে বিক্রি করে দেয়া হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি খালাস পেলে এই অর্থ পেয়ে যাবেন। দণ্ড পেলে আদালত যেভাবে আদেশ দেবে, সেভাবেই তা কার্যকর হবে।
খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে ক্ষতিকর কিছু মিশিয়ে উৎপাদন করা, নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মজুদ করা, সরকারী কর্মসূচীর নামাঙ্কিত বা বিতরণকৃত এমন চিহ্নযুক্ত ছাড়া সরকারী খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যশস্য ভর্তি বস্তা গ্রহণ, স্থানান্তর, হাতবদল বা পুনরায় বিক্রি করা এই আইনে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ক্রেতার স্বার্থ রক্ষায় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করছে। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধে গ্রহণ করা হয়েছে নানা উদ্যোগ। কোন উদ্যোগই সফল হয়নি। নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি অসাধু ব্যবসায়ীদের। এবার প্রণয়ন করা হয়েছে নতুন আইন। এই আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার বাজারে ক্রেতাদের ভোগান্তি দূর করবে বলেই ক্রেতা সাধারণের প্রত্যাশা।