সিয়াম সাধনার মাস

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ মাহে রমজানের ১২তম দিবস। আজ এ মাসের সঙ্গে একটি উৎসাহব্যঞ্জক ফরজ আদায়ের হুকুম-আহকাম ব্যক্ত করব। তা হলো যাকাত আদায়। কোন সম্পদের ওপর এক বছর সময় পার হলে সম্পদের মালিককে নেসাবের ওপর যাকাত ফরজ হয়। বছরের যে কোনদিনে যে কোন মাসে এই ফরজ আদায় করা যায়। কিন্তু মুসলিম জাতি অশেষ করুণা ও একটি ফরজ আদায়ে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়ার নিয়তে এ মাসে ব্যাপকভাবে যাকাত প্রদান করে থাকে। আসুন, এ মহামূল্যবান ফরজ ইবাদাত সম্পর্কে ইসলাম কীভাবে গুরুত্বারোপ করেছে, দেখি। যাকাত একটি আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি পাওয়া,বরকত লাভ হওয়া, প্রশংসা করা ইত্যাদি। কোরান মাজিদ ও হাদিস শরীফে এসব অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে (শামী ২য় খন্ড)।
শরীয়াতের পরিভাষায় যাকাত বলা হয় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কর্তৃক বছরান্তে তার সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ (শতকরা ২.৫০ টাকা হারে) যাকাতের হকদার ব্যক্তিকে প্রদান করা। নিসাবের মালিক ব্যক্তির ওপর যাকাত ্্্্আদায় করার বিষয়টি অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। এর ফরযিয়াত অস্বীকার করা কুফরী। নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর বছর অতিবাহিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার যাকাত করা ফরজ। বিনা কারণে বিলম্ব করলে গুনাহগার হবে।
দ্বিতীয় হিজরী সনে জাকাত ফরজ হয়েছে। কোরআন হাদিস ও ইজমার দ্বারা যাকাতের ফরযিয়াত প্রমাণিত। পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা নামাজ কায়েম কর ও যাকাত আদায় করে দাও, আর যারা রুকু করে তাদের সঙ্গে রুকু কর। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পরিশোধিত করুন। আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন। আপনার দোয়া তাদের জন্য চিত্তপ্রশান্তিকর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ( ৯:১০৩)। আরও ইরশাদ হয়েছে: এবং তাদের ধনীদের ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে (৫১:১৯)। আরও ইরশাদ হয়েছে : আর যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না অর্থাৎ যাকাত দেয় না তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দিন (৯:৩৪)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের ওপর
১.এ মর্মে সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।
২.নামাজ কায়েম করা।
৩. যাকাত প্রদান করা।
৪. রমজান মাসে রোজা রাখা ও
৫. বায়তুল্লাহর জিয়ারতে সক্ষম ব্যক্তির জন্য হজ আদায় করা – (বুখারী ও মুসলিম)।
অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান মাসে রোজা রাখবে, বায়তুল্লাহ্ শরীফের হজ আদায় করবে এবং সন্তুষ্টচিত্তে তোমাদের সম্পদের জাকাত আদায় করবে। তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করবে -(তিরমিজি)।
যাকাত ফরজ হওয়ার হিকমত ও উপকারিতা :
যাকাত আদায়ের মধ্যে বহু হিকমত ও উপকারিতা নিহিত আছে। যেমন – যাকাত আদায়ের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় এবং অন্তরের পবিত্রতা লাভ হয়। এতে মানুষের অন্তর থেকে কৃপণতার মনোভাব বিদূরিত হয়। ঈমানী শক্তি ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। এবং ধনসম্পদের মোহ কেটে যায়। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে হামদর্দী ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়। একে অন্যের সুখে, দুঃখে সাহায্য-সহযোগিতার অভ্যাস ও পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং ধনীদের সম্পদে গরিবের যে হক রয়েছে তা আদায় হয়। যাকাত দান করলে এর উসিলায় গুনাহ মাফ হয় এবং ধনসম্পদের বরকত হয়। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া নি’আমাতের শুকরিয়া আদায় হয়। এর বরকতে যথাসময়ে বর্ধিত হয় ও ফলন ভাল হয়।
প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বুদ্ধি-জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম নারী ও পুরুষের মালের ওপর কতিপয় শর্তসাপেক্ষে যাকাত ফরজ করা হয়েছে। কোন অমুসলিম ব্যক্তির ওপর যাকাত ধার্য করা যাবে না- এ বিষয়ে উম্মতের ঐকমত্য (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কারণ যাকাত একপ্রকারের ইবাদত যা কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত হলো ইসলাম গ্রহণ। ইসলাম গ্রহণের পরই কোন ব্যক্তির ওপর ইসলামের বিধান মান্য করা বাধ্যতামূলক হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন বালক, বালিকা এবং পাগলের মালের ওপরও যাকাত ফরজ নয়। কারণ তাদের ওপর শরীয়তের বিধান পালনের কোন দায়িত্ব নেই। যেসব শর্তসাপেক্ষে উপরোক্ত ব্যক্তির মালের ওপর যাকাত ধার্য করা হয় তা হলো: (১) মালের ওপর পূর্ণ একটি (চান্দ্র) বছর তার পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকতে হবে। (২) মাল এমন প্রকৃতির হতে হবে যার ওপর যাকাত ধার্য হতে পারে। (৩) মাল নিসাব পরিমাণ বা নিসাবের মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে। (৪) ঐ নিসাব পরিমাণ মাল তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে।
সুতরাং আসুন, আমরা যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মাহে রমজানে আমাদের সহায়সম্পত্তি পবিত্র করে তুলি এবং গরিব-দুখীদের হক আদায় করে আল্লাহর কাছে নিজেকে তার প্রিয়ভাজন করার প্রয়াস চালাই।