কাজিরবাজার ডেস্ক :
চরম অর্থসংকটের কারণে এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার জন্য বিদেশি ঋণ পরিশোধ ‘চ্যালেঞ্জিং ও অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে। এ কারণে আপাতত সব ধরনের বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি. নন্দলাল বীরসিংহে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ভুগছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির চারদিকে এখন শুধুই হাহাকার। চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। তেল সংগ্রহের জন্য হাজার-হাজার মানুষ লাইনে ভিড় করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পেট্রোল পাম্পগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে লঙ্কান সরকার। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে আজ জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় ঠেকেছে, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয়ও মেটাতে পারছে না। যার ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।
চরম অর্থসংকটের মুখে ক্ষুব্ধ জনগণ লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করছে। রাস্তায় বিক্ষোভ চললে এক মাসের বেশি হলো। পরিস্থিতি সামলাতে কারফিউও জারি করতে হয়েছে লঙ্কান সরকারকে।
গত দুই বছরে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এ অবস্থায় মঙ্গলবার লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের অপরিহার্য আমদানিতে নজর দিতে হবে, বাহ্যিক ঋণের বিষয়ে চিন্তা করার মতো অবস্থা নেই। এটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঋণ পরিশোধ চ্যালেঞ্জিং ও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বীরসিংহে জানান, ঋণদাতা ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে একটি চুক্তিতে না আসা পর্যন্ত বিদেশি ঋণের কিস্তি প্রদান স্থগিত রাখবে শ্রীলঙ্কা। জরুরি ঋণের বিষয়ে সোমবার বৈশ্বিক ঋণদাতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে দেশটি।
খবর অনুসারে, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণের কিস্তি রয়েছে, যার মধ্যে জুলাই মাসে রয়েছে ১০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের কিস্তি।
বিদেশি ঋণের কিস্তি স্থগিত করা প্রসঙ্গে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান জেবি সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী মুর্তজা জাফার্জী বলেন, এমনটি অনিবার্য ছিল। কারণ আমরা ঋণ পরিশোধের জন্য দুর্লভ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার করছিলাম, যখন আমাদের সামর্থ্য ছিল না। এখন আমাদের নিজস্ব নাগরিকদের জন্য অর্থের সংস্থান হবে।
গভর্নর বীরাসিংহে বলেছেন, তারা বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা থেকে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। কারণ ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি আগে কখনোই ঋণখেলাপি হয়নি।