কাজিরবাজার ডেস্ক :
এক দশক আগে (২০১২-১৩ অর্থবছর) দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ছিল লাখ টনের উপরে। গত আখ মাড়াই মৌসুমে (২০২০-২১ অর্থবছর) সেই উৎপাদন কমতে কমতে এসে ঠেকে ৪৮ হাজার ১৩৩ টনে। চলতি অর্থবছর (২০২১-২২) উৎপাদন হয়েছে সর্বসাকুল্যে ২৪ হাজার ৯শ টন, যা সরকারি কলে উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও দেশের চিনিকলগুলোতে উৎপাদন লাখ টনের বেশি ছিল। সেই অর্থবছরে ১ লাখ ২৮ হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়। এরপর শুরু হয় পতন। এক ধাক্কায় পরের বছর (২০১৪-১৫ অর্থবছরে) উৎপাদন নামে ৭৭ হাজার ৪৫০ টনে। এর পরের দুই বছর উৎপাদন আরও কমে। তারপর আবার বাড়ে পরের দুই বছর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন ৮২ হাজার ১৪০ টনে ঠেকে। এরপর আবার কমতে কমতে চলতি বছরে যা গিয়ে ঠেকেছে একেবারে তলানিতে।
এ বিষয়ে চিনিকলগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) পরিচালক (উৎপাদন ও প্রকৌশল) এনায়েত হোসেন বলেন, মূলত কাঁচামালের অভাবে চিনির উৎপাদন কমেছে। এছাড়া বর্তমানে চালু চিনিকলগুলো অনেক পুরোনো, অবচয় খুব বেশি। সেখানে ইচ্ছা থাকলেও বেশি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।
‘এছাড়া উৎপাদনে বড় ধাক্কার আরেক কারণ ২০২০ সালে ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া। চিনিকলগুলোর লোকসানের বোঝা কমাতে ওই সময় বিএসএফআইসি এসব চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় ১৫টির মধ্যে ছয়টি চিনিকল বন্ধ হয়।’
তারপরও গত মৌসুমে চালু নয়টি চিনিকল তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারেনি। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত আখ ও বন্ধ চিনিকল থেকে সংগৃহীত আখের স্বল্পতার কারণে উৎপাদনে থাকা চিনিকল তিন থেকে পাঁচ মাস চালু ছিল। দু-একটি মিল একমাসও চলেনি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি অর্থবছর অবস্থা আরও খারাপ। কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল বন্ধ হওয়ায় সেসব এলাকায় আখের উৎপাদন একেবারেই কমে গেছে। এছাড়া চালু মিল এলাকায় অর্থসংকটে চাষিদের সার ও বীজ সরবরাহ করেনি বিএসএফআইসি। এ কারণে কাঁচামাল সংকট এ মৌসুমে আরও প্রকট হবে, যাতে উৎপাদন আরও কমার শঙ্কা রয়ে গেছে।
বিএসএফআইসির তথ্যমতে, দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে তিনটি ত্রিশের দশক, তিনটি পঞ্চাশের দশক, সাতটি ষাটের দশক ও দুটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে স্থাপিত হয়। অধিকাংশ চিনিকলের যন্ত্রাংশ পুরোনো ও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে স্থাপনকালীন উৎপাদন ক্ষমতা কমতে কমতে নেমেছে তলানিতে। ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ১০টি চিনিকলের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল এরই মধ্যে শেষ।
বিএসএফআইসির বলছে, সেগুলো যথাযথ মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও বিএমআরইকরণের (ব্যালেন্সিং মর্ডানাইজেশন রেনোভেশন অ্যান্ড এক্সপেনশন) মাধ্যমে চালু রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাতে চিনি উৎপাদন ব্যয় বাজারদরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সে কারণে সবশেষ ছয়টি মিল বন্ধ করা হয়েছে। চালু কলেও চিনি উৎপাদন যত বাড়বে বিএসএফআইসির লোকসান তত ভারী হবে। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত চিনির উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে নয় সংস্থাটির অধিকাংশ নীতিনির্ধারক।