সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও বিশ^ যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’। দিবসটি পালন উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেট এবং সিভিল সার্জন সিলেট অফিসের যৌথ আয়োজনে ও হীড বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নাটাব, আশার আলো সোসাইটি, সেভ দ্যা চিলড্রেন, উজ্জীবনসহ বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর চৌহাট্টাস্থ স্বাস্থ্যভবন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
র্যালিটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সিলেট বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. হিমাংশু লাল রায় এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ। মেডিকেল অফিসার ডা. সিধু সিংহ-এর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় টিবি কনসালটেন্ট ডা. সাইদ আনোয়ার রুমি, সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নুরে আলম শামীম, সিলেট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমদ সিরাজুম মুনির, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান, সিলেট সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা সুজন বণিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এম. গৌছ আহমদ চৌধুরী, মেডিকেল অফিসার ডা. মির্জা লুৎফুল বারী, ডা. স্নিগ্ধা তালুকদার, প্রোগ্রাম অর্গানাইজার আব্দুল আউয়াল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক লোকসংগীত পরিবেশন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ বলেন, বাংলাদেশে চাইলে আমরা সবই পারি, আমরা ইতোমধ্যে এর প্রমাণ রেখেছি। বাংলাদেশকে যক্ষ্মামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করলে, দায়িত্ব ও কর্তব্য শতভাগ নিশ্চিত করলে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, যক্ষ্মা রোগীর প্রতি সহানুভূতি নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের উপর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সভায় জানানো হয়, বর্তমানে সিলেট জেলায় ২৫ টি মাইক্রোস্কোপি ও ডট্স সেন্টার, ১ টি ইকিউএ ল্যাব, ১০ টি জিন এক্সপার্ট ল্যাব এবং ১টি বায়োসেফটি ল্যাব-এর মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সিলেটে ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর) রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয় এবং ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর ) রোগীর চিকিৎসার জন্য ৩২ টি বেড সংরক্ষিত করা হয়।
সভায় আরো জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার লোক নতুনভাবে যক্ষ্মা আক্রান্ত হয় এবং ৪৪ হাজারেরও বেশি যক্ষ্মা রোগী মৃত্যুবরণ করে। প্রাচীন এই যক্ষ্মা রোগকে নির্মূলের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ^ যক্ষ্মা দিবস পালনের ঘোষণা করে এবং যক্ষ্মা রোগকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ডটস নামে কার্যকরী চিকিৎসা কৌশল বাংলাদেশে ১৯৯৩ সাল থেকে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। সিলেট জেলায় ২০২১ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বমোট ৮৩৮৪ জন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে কফে যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে ৫৭২৪ জন। কফে জীবাণুযুক্ত ১২৮৪ ও ফুসফুস বহির্ভূত ১৩৭৬ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয়েছে। ১৫ বছরের কম বয়সের ৩১১ জন শিশু যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয়েছে। সকল ধরনের যক্ষ্মারোগে চিহ্নিতকরণের হার ১৭৪.৯৩ জন। প্রতি লক্ষ্য জনগোষ্ঠীতে ২০২০ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় সকল ধরনের যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার সাফল্যের হার শতকরা ৯৬.৮৫। ২০২১ সালে ২২ হাজার ৩৯২ জন রোগী পরীক্ষা করা হয় এর মধ্যে ৪৩ জনকে ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী শনাক্তপূর্বক চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি