করোনা পরিস্থিতিতে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট হয়েছে। অন্যদিকে শহর থেকে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শহরের অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। অনেকেই কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছে। আবার বিদেশ থেকেও অনেকে ফিরে এসেছে গ্রামে। এ অবস্থায় গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার কোনো বিকল্প নেই। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে হলে দরকার কর্মসংস্থান। নগদ টাকার হাতবদলও প্রয়োজন। শুধু ত্রাণ দিয়ে বেশি দিন অর্থনীতি চাঙ্গা রাখা যাবে না। ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় কিছু টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কারো কর্মসংস্থান হবে না। স্থায়ী বা অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে কেন্দ্র থেকে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ানো গেলে গ্রামের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। গ্রামীণ অর্থনীতির চাপ কমাতে সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্তা প্রশস্তকরণ, সেতু ও কালভার্ট তৈরি, রাস্তার পাশে গাছ লাগানো কর্মসূচির বিভাগভিত্তিক আটটি প্রকল্প গ্রহণ। আটটি বিভাগের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা করে এসব প্রকল্পে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো অনুমোদনের জন্য প্রায় তিন মাস আগে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্প দ্রুত অনুমোদনের জন্য কমিশনকে অনুরোধ করেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মতে, দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের জন্য এসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় কাজ পাবে নারী-পুরুষ সবাই। তাদের মতে অনুমোদন দিলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব প্রকল্পের কাজ চলবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে রাস্তা প্রশস্তকরণ, সেতু ও কালভার্ট তৈরি, রাস্তার পাশে গাছ লাগানো কর্মসূচি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এসব প্রকল্প নিয়ে বৈঠক করলেও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে পাঠানো হয়নি।
এসব প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে না পাঠানোর কারণ হচ্ছে, সরকারের অগ্রাধিকারের কারণে করোনার এ সময় তাদের মনোযোগ স্বাস্থ্য খাতের দিকে। কমিশন সম্ভবত নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন না করে পুরনো প্রকল্পের ওপর বিশেষ জোর দিতে চায়। নতুন প্রকল্প না নিয়ে যেসব প্রকল্পের কাজ চলমান, সেসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করার ব্যাপারেই তাদের আগ্রহ।
এই করোনা পরিস্থিতিতে শহরের ওপর থেকে চাপ কমাতে গ্রামীণ অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা আশা করব, প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে। গতি ফিরবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।