সমাজসম্মত ধারণা হলো বিএ, এমএ পাস না করলে শিক্ষিত হওয়া যায় না। পক্ষান্তরে কথাটির অর্থ হয় যে, বিএ, এমএ পাস করলেই শিক্ষিত হওয়া যায়। সাধারণভাবে এটাকে অগ্রহণযোগ্য বলা যাবে না, কিংবা উপেক্ষা করা চলে না। কোন রাষ্ট্রে কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষিত হওয়ার একটা মানদন্ড সর্বজনীনভাবেই প্রচলিত রয়েছে। তবে শেখার কোন শেষ নেই। আর স্বশিক্ষিত মানুষও শিক্ষিত। শিক্ষা প্রদানের জন্য দেশে দেশে থাকে শিক্ষাব্যবস্থা। পন্ডিতেরা বসে সেই ব্যবস্থার ছক আঁকেন। আরেক দল বিশেষজ্ঞ তৈরি করেন পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী। শিশুর বয়সের ধাপে ধাপে সেটির পরিবর্তন ঘটে, নতুন বিষয় সংযোজিত হয়। তবে প্রচলিত শিক্ষার্জন করে অনেকে শিক্ষিত নাও হতে পারেন। শিক্ষা একটি প্রসারিত সময়-ঊর্ধ্ব ব্যাপক বিষয়। গড়পড়তা মানের শিক্ষিতজন বেরিয়ে আসেন বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষা সমাপ্তি শেষে। জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি অর্থকরী কাজ মানুষের দরকার। যে কাজ করার জন্য শ্রমবাজারে সার্টিফিকেটের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সার্টিফিকেট বা সনদপত্রের অধিকারী হলেই কি সত্যিকারের শিক্ষিত হয়া যায়? তাছাড়া সার্টিফিকেট অর্জন করলেই কি মানুষ হওয়া যায়? যায় না। মানুষ হওয়ার শিক্ষা আরও ব্যাপক। প্রতিদিনের জীবন থেকেই মানুষ হওয়ার শিক্ষা মেলে। প্রচলিত ধারায় স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রী একেবারে মূল্যহীন নয়। তবে মূল্যবান হচ্ছে মানুষ হয়ে ওঠা। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ রবিবার ‘বাংলাদেশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি’ আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি দেয়া ভাষণে কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষা যাতে কোনভাবেই সার্টিফিকেটসর্বস্ব না হয়। নোট মুখস্থ করে পাস নয়, আমরা চাই সৃজনশীল মানুষ হওয়ার শিক্ষা।’ এ কথাগুলো অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ, যা অনুধাবনের জন্য বিশদ বিবেচনা জরুরী।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, কুসংস্কারমুক্ত আর খোলা মনের আলোকিত ব্যক্তিত্ব গড়ার শিক্ষা আমরা চাই। আমরা ভালো কিছু অবশ্যই চাই। তবে সেই চাওয়া পূরণের জন্য পথও আমাদের জানা থাকতে হবে। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যে পাঠ্যপুস্তক আমাদের সন্তানরা পড়ে থাকে তা কি কুসংস্কারমুক্ত হওয়ার বাতায়নসমৃদ্ধ? খোলা মন বা মুক্ত মন তৈরির জন্য সমাজের পরিবার ও শিক্ষালয়গুলো কতটা ইতিবাচক ও সহায়ক? নীতিনৈতিকতার শিক্ষাদানে আমাদের যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব বিষয় এড়িয়ে আমরা নতুন প্রজন্মকে কিভাবে মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেব? শিক্ষা প্রদানের অভিপ্রায় যদি থাকে মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যক্তিকে উপযুক্ত করে তোলা তাহলে মানবিকতাবোধহীন অন্ধকারমুখী রোবট-মানবই তো আমরা পাব!
তাহলে কি উপায়? সেই উপায়ের পথ বাতলে দেবেন সত্যিকারের জ্ঞানীগুণীরাই, শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানমনস্ক কুসংস্কারমুক্ত অগ্রসর মানুষেরাই। এজন্য প্রয়োজনে নতুন করে পাঠ্যসূচী ও পাঠদান প্রক্রিয়া ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষকদের সনাতন ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে একেকটি আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে হবে সৃজনশীলতা ও জ্ঞানের পথ ধরে। তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং দক্ষ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ, তথা বিশ^মানব হওয়ার দীক্ষায় দীক্ষিত করা চাই।