রোহিঙ্গা সমস্যা দূর করুন

4

গত প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাস্তবে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। আন্তর্জাতিক মহলের চাপে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও কোন ফল হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ সময়েও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং সঙ্কট নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি শুধু আহ্বান জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি, তিনি ছয়টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছিলেন। সম্প্রতি ফ্রান্স সফরেও প্রধানমন্ত্রী সমস্যাটি উপস্থাপন করেন। এমন এক পরিস্থিতিতে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানের তাগিদ দিয়ে জাতিসংঘ কমিটিতে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই প্রস্তাবে রাশিয়া এবং চীন বিরোধিতা করেনি। ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনীত এই প্রস্তাব জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটি হিসেবে পরিচিত সোশ্যাল হিউম্যানিটারিয়ান এ্যান্ড কালচারাল কমিটিতে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। প্রস্তাব পাসের প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন রাশিয়া এবং চীনের সমর্থনকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেন, চীন এবং রাশিয়াও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায়। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক সংবাদ।
প্রস্তাবটি নেয়া হয়েছে মূলত মিয়ানমারে জরুরী অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনায়।
বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘জাতিসংঘে এবারই প্রথম রোহিঙ্গা রেজ্যুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো। এতে সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন ঘটেছে। এটি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে।’ রোহিঙ্গা এখন শুধু বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা নয়, আর্থ-সমাজিক সকল ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গারা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, এই প্রস্তাব পাশের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। আমাদের প্রত্যাশা, এই চাপে অচিরেই শুরু হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। তাতে বাংলাদেশও হবে এই মারাত্মক সঙ্কটের রাহুমুক্ত।