কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে সরকারের ওএমএস কার্যক্রম। বোরো ফসল না ওঠা পর্যন্ত দেশব্যাপী এই কার্যক্রম চলবে। সঙ্গে থাকছে জোরালো তদারকির ব্যবস্থাও। পাশাপাশি প্রতি ট্রাকের সঙ্গে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কোন রকম অনিয়ম ধরা পড়লে ডিলারশিপ বাতিলসহ প্রয়োজনে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণও করা হতে পারে। চালের মূল্যের লাগাম টানতে আগামীকাল ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন থেকে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা ব্যাপক হারে ওএমএস কার্যক্রম শুরু করছি। এতে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৮ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করা হবে। নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। এতে দেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গরিবের কথা বেশি ভাবতেন। তিনি ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। তাই জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে দেশব্যাপী ওএমএস কার্যক্রম দ্বিগুণেরও বেশি করা হচ্ছে। তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটা মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের অগ্রগতি নিয়ে ভাবেন। তিনি মনে করেন গরিবরা ভাল থাকলে দেশও ভাল থাকবে। সারা বিশ্বের অগ্রগতি যখন থমকে গেছে, তখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার জন্য দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
সূত্র জানায়, এবার ওএমএস কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতি ট্রাকে একজন করে কর্মকর্তা তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া প্রতি ৫টি ট্রাক ভিডিও কলের মাধ্যমে তদারকি করবেন খাদ্য মন্ত্রণালয় অথবা খাদ্য অধিদফতরের একজন করে গেজেটেড কর্মকর্তা। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও গোপনে তদারিক করবেন।
এরপরও কোন প্রকার অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে থাকছে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। চুরি বা ওজনে কারচুপিসহ যে কোন অপরাধে ডিলারশীপ বাতিলসহ ফৌজদারি মামলা হতে পারে। তদারকিতে কোন রকমের ঘাটতি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এমনকি বিভাগীয় ব্যবস্থাও হতে পারে। এছাড়াও প্রতি ট্রাক তদারকিতে এবার পুলিশকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিদিন ৪৭৬ মেট্রিক টন চাল খোলা বাজারে বিক্রির ঘটনা নতুন। এই বিশাল পরিমাণ চাল বাজারে এলে বাজার নিম্নমুখী হবে বলে বিশ্বাস করি। এ ছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ফেয়ার প্রাইস কার্ডসহ সরকারের নানাবিধ কর্মসূচী চালের বাজায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে প্রতিদিন ৫৪টি ট্রাকে করে চাল-আটা মিলে ২১৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ১৮৯ মেট্রিক টন চাল ও ২৭ মেট্রিক টন আটা রয়েছে। দেশের ৫৪টি ট্রাকের মধ্যে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় ৩০টি ট্রাকে প্রতিদিন ১২০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরিতে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ মেট্রিক টন চাল এবং ১৫ মেট্রিক টন আটা। এছাড়া গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৪টি করে ট্রাকে চাল-আটা মিলে মোট ৯৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৪ মেট্রিক টন চাল এবং ১২ মেট্রিক টন আটা রয়েছে। এই কর্মসূচীর আওতায় প্রতিদিন জনপ্রতি ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য কিনতে পারবেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে আরও ৬৫টি ট্রাকে করে খোলা বাজারে খাদ্য শস্য বিক্রি শুরু হচ্ছে। এ নিয়ে দেশে মোট ১১৯ ট্রাকে করে প্রতিদিন ৪৭৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য খোলা বাজারে বিক্রি করা হবে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন ৪১৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৫৯ দশমিক ৫ মেট্রিক আটা বিক্রি হবে।
রাজধানী ঢাকা মহনগরিতে বাড়ছে আরও ২০টি ট্রাক সেল। এছাড়া গাজীপুরে ৪টি, নারায়ণগঞ্জে ৪টি, বরিশালে ৩টি, রাজশাহীতে ৪টি, খুলনায় ৬টি এবং চট্টগ্রামে ৭টি। পাশাপাশি নতুন করে শুরু হচ্ছে ময়মনসিংহতে ৪টি, সিলেটে ৪টি, রংপুরে ৫টি এবং কুমিল্লায় ৪টি করে ট্রাক। নতুন এই ২১টি ট্রাকে করে প্রতিদিন মোট ৮৪ মেট্রি টন খাদ্য শস্য খোলা বাজারে বিক্রি হবে। এর মধ্যে চাল বিক্রি হবে ৭৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন এবং আটা ১০ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।