বিশ্ববাজারে রেকর্ড দামে তিন পণ্য

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চলল। ইউক্রেন রাশিয়াতে তো বটেই, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নানাভাবে পড়তে শুরু করেছে যুদ্ধের প্রভাব। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে সোমবার জ্বালানি তেলের মানদ- ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২৫ থেকে ১৩৯ ডলারে উঠানামা করেছে। ২০০৮ সালের পর এটাই জ্বালানির সর্বোচ্চ দাম। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে তেলের দাম। একই সঙ্গে গত ১৪ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে গম। এর কারণ গম উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। বলা হচ্ছে, যুদ্ধ শুরুর দু’সপ্তাহ যেতে না যেতেই গমের জোগানে টান পড়েছে। আর তারই প্রভাব পড়েছে দামে। অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে শঙ্কার মধ্যে বিশ্ববাজারে ব্যাপক হারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। ১৮ মাসের মধ্যে এই প্রথম স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি দুই হাজার ডলার ছুঁয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। যুদ্ধের আগেই ধারণা করা হচ্ছিল, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে জ্বালানির দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার পেরিয়ে যাবে। সেই আশঙ্কা সত্যি করে এবার জ্বালানির দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলারে উঠল। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের দেশে দেশে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। এর জেরে গত বছরের ৩ নবেম্বর দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটারে ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সেদিন।
এদিকে গত রবিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, বাইডেন প্রশাসন ও তার মিত্ররা রাশিয়ার তেল সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করছে। এরপর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, রাশিয়ার তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার জন্য জুতসই আইনের খোঁজ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ সপ্তাহে কংগ্রেস রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার কোটি ডলারের সহায়তার তহবিল অনুমোদনের চেষ্টা করছে। এক চিঠিতে পেলোসি আরও বলেছেন, হাউস এই মুহূর্তে রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে শক্তিশালী আইনের খোঁজ করছে। হোয়াইট হাউস এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চাপ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেন পেলোসি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। কৃষ্ণসাগরে বন্দর ঘিরে যে বাণিজ্য চলছিল তা বাধার মুখে পড়ে। সেজন্য শিকাগোর আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী গমের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। গত একদশকে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এবার তা আরও বাড়ার আশঙ্কা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর প্রধান জুলি মার্শাল বলছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন গোটা দুনিয়ার ৩০ শতাংশ গম রফতানি করে। সেটা না এলে খাদ্য সুরক্ষায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। মধ্য এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা গমের আমদানির ওপরে নির্ভরশালী। ফলে কোটি কোটি মানুষ খাবার থেকে বঞ্চিত হবেন। এমনকি সর্বাধিক গম উৎপাদনের দেশে কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও প্রভাবিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত ১৪ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে গম। এর কারণ গম উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। বলা হচ্ছে, যুদ্ধ শুরুর দু’সপ্তাহ যেতে না যেতেই গমের জোগানে টান পড়েছে। আর তারই প্রভাব পড়েছে দামে।
এদিকে অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে শঙ্কার মধ্যে বিশ্ববাজারে ব্যাপক হারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। মূল্যবান ধাতুটির এক আউন্সের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দুই হাজার ১ ডলার, যেটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সর্বোচ্চ। সোমবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত থাকায় পণ্যের মজুত নিশ্চিত করতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়েছে ইক্যুইটি মার্কেটে।
এদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভাল মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম তিন হাজার ২৬৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭৮ হাজার ২৬৫ হাজার টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৭৬৬ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৪ হাজার ১৫২ টাকা করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ২১৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৪২১ টাকা। এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়ে স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস, যা কার্যকর হয় ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। সে সময় সবচেয়ে ভাল মানের ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৮৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ এক হাজার ৬৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭১ হাজার ৬৭৫ টাকা করা হয়। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৮১৪ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬১ হাজার ৮১৯ টাকা। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২৯১ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৫১ হাজার ২০৫ টাকা।
এদিকে স্বর্ণের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রুপা ও প্লাটিনামের দামও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৬৭ ডলারে। আর এক দামী ধাতু প্লাটিনামের দাম গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২১ দশমিক ৩৪ ডলার।