স্বাধীনতার মাসে সঙ্গত কারণেই একাত্তরের মার্চের বহু স্মৃতিই আমাদের মনে পড়ে যায়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতা, স্বাধীনতাকামী মানুষের রুখে দাঁড়ানো এবং একপর্যায়ে যুদ্ধের জন্য সংগঠিত হওয়া- এ সবই ইতিহাসের অংশ। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। কেবলমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বতন্ত্র একটি দিবসের প্রয়োজন তাই অস্বীকার করার নয়। ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ পালনের সুপারিশে অগ্রগতি না থাকায় সংসদীয় কমিটির অসন্তোষ প্রকাশ তাই সঙ্গত। ডিসেম্বরের প্রথমদিন অর্থাৎ প্রতিবছর পহেলা ডিসেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ পালন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধাসংক্রান্ত বুকলেট প্রকাশ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছিল। গত বছরে অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংদীয় কমিটি এই সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল বিষয়টি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। গত চার মাসেও এ বিষয়ে কোন কিছু না হওয়ায় কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের স্মৃতিবিজড়িত সকল বিষয়ই মহামূল্যবান। তাদের বীরত্বগাথার বহুল প্রকাশই কাম্য। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেরই সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবস্থা নিয়েছে তাদের যথোচিত সম্মান জানানোর। কিছুকাল আগে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী যথার্থই ইতিহাসের পাতা থেকে মূল্যবান উপাদান তুলে এনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্দিষ্ট স্থান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে সংরক্ষণ করতে চাই। যেখানে মানুষ গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল, সেসব স্থান বর্তমান সরকার সংরক্ষণ করছে। সংরক্ষণ করছে বধ্যভূমিগুলোও। মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিও নির্দিষ্ট ডিজাইনে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে ৫০ বছর পরেও একটি কবর দেখে বোঝা যায়, এখানে শায়িত রয়েছেন দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জাতি প্রত্যাশা করে, আগামী প্রজন্ম দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্পর্কে আরও জানবে এবং তাদের প্রকৃত সম্মান করবে। কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ একটি দিবস থাকার যৌক্তিকতা রয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে এখনও দেশে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এসব শব্দ অনেক মানুষের কাছেই অপ্রিয়, যারা এদেশের সন্তান হলেও মনেপ্রাণে পাকিস্তানপন্থী। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষই এদেশে সিংহভাগ, সেটি নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। অধিকাংশ মানুষই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে। দিবস হিসেবে উদ্যাপন করতে পারলে বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে।