স্টাফ রিপোর্টার :
রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নাম করে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় নগরীর জিন্দাবাজারস্থ হক সুপার মার্কেটের আমিন রহমান ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমানকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে দক্ষিণ সুরমার তেলিবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী আমিন রহমান ট্রাভেলসের মালিক আমিনুর রহমান, তার ভাই সিদ্দিকুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে আসামী করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ফখরুল ইসলাম। তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নিজগাঁওয়ে। তারা নগরীর শাহজালাল উপশহরের জি ব্লকের ৪ নং রোডের ৯৬ নং বাসার তোফাজ্জল আলীর পুত্র। বাদী ছাড়াও ১৮ প্রতারিত তরুণ-তরুণী মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন। তারা নগদ ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৫ হাজার প্রদানের ফিরিস্তি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
জানা যায়, আমিন রহমান কানাডা, রোমানিয়া ও পোল্যান্ড পাঠানোর নামে শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা নিয়ে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন জাল ভিসা ও টিকিট। ভুয়া কাগজপত্রের কারণে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে অনেককে। তার প্রতারণার শিকার অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি। প্রত্যেকের সঙ্গে জাল ভিসা ও টিকিট দিয়ে প্রতারণা করেছেন তিনি। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা সর্বস্ব হারিয়ে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, কানাডা, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া পাঠানোর নামে প্রায় দুইশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেন আমিন রহমান ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমান। কানাডা পাঠানোর নামে ১৭ লাখ টাকা চুক্তি করে ২০ থেকে ২৫ জনের কাছ থেকে দুই দফায় নিয়েছেন ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে পাসপোর্ট নেওয়ার সময় দুই লাখ টাকা পরে টিকিট দেওয়ার সময় নেন বাকি ১৫ লাখ টাকা। একইভাবে ১২ লাখ টাকায় পোল্যান্ড পাঠানোর চুক্তি করে ২৫ থেকে ৩০ জনের কাছ থেকে দুই দফায় নেন ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া রোমানিয়া পাঠানোর কথা বলে ৭ লাখ টাকা চুক্তি করে দেড়শতাধিক লোকের কাছ থেকে নিয়েছেন ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা জানান, খবর জানাজানি হলে শুক্রবার আমিনের বাসায় গিয়ে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। মুঠোফোনেও যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার অফিসে এসেও তাকে পাওয়া যায়নি। এসময় তার অফিসের এক কর্মী জানান তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। হোয়াটসঅ্যাপে একটি নম্বরে যোগাযোগ করে বলেছেন ফ্লাইট না হলে সবার টাকা ফিরিয়ে দিবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক যুবক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী রোমানিয়া পৌছার আগে ৫০ হাজার টাকা জমা দেই। কিন্তু তিনি সব টাকা পরিশোধ করে ভিসা নিতে চাপ দিতে থাকেন। পরে ভিসার কাগজপত্র আরেকটি ট্রাভেলসের মাধ্যমে রোমানিয়ান অ্যাম্বাসিতে পাঠাই। অ্যাম্বাসি থেকে বলা হয় এটি জাল ভিসা।
রাজিব নামের একজন জানান, তাকে বিশ্বাস করে সব টাকা দিয়ে ভিসা বুঝে নেই। কিন্তু এই ভিসা ও টিকিট যে জাল তা আমি বুঝতে পারিনি। এভাবে শতাধিক মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।