(পূর্বে প্রকাশের পর)
এমনকি ১৮১৬ সালে বন্দরবাজার দুর্গা কুমার পাঠশালা, ব্রহ্মসমাজ, মুসলিম ছাত্রাবাস (বর্তমানে মধুবন সুপার মার্কেট), লামাবাজার পাঠশালা (পূর্বে কুয়ারপার পাদরী), লালদিঘী বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন, ধোপাদিঘী বর্তমানে সিলেট সিটি কর্পোরেশন, ডি.সি’র বাংলো, স্টেশন ক্লাব, সিলেট হেড পোস্ট অফিস, পুলিশ লাইন অফিস, জেলা কাউন্সিল, ডিসি অফিস, কালেক্ট্রটর অফিস, জেলা জজ, রেজিস্টারীর অফিস, চালিবন্দর শ্মশানঘাট, মহাপ্রভূর আশ্রম (তেলিহাওর-পাগলার আশ্রম) ও সরকারী বালক স্কুল জমি দান করেন শ্রী বিমলেন্দু দাস (সাধু বাবু)র পরিবার। পরে এসব জায়গাগুলো সরকারী খতিয়ানভুক্ত হয়ে যায়।
১৯৪৪ ও ১৯৪৫ সালে সুর সাগর প্রাণেশ দাসের স্কুলের ফান্ডের জন্য দেশ-বিদেশের নামী-দামী শিল্পী কেরামত আলি (তবলা), আলি হোসেন (সানাই), সংগীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, ভক্তিময় দাস ও বেসু দত্ত প্রমুখ দিয়ে সংগীত সম্মেলন করান সাধু বাবু। এই লক্ষ্যে তখন তার সম্পাদক ছিলেন রণেন্দ্র কৃষ্ণ মজুমদার (বকুল মজুমদার), শ্রী সিখান ক্লাবের সেক্রেটারী অনিল রঞ্জন ঘোষ ও সমর পুরকায়স্ত। সুর সাগর প্রাণেশ দাসের স্কুলের ফান্ড ছাড়াও মিউজিক কনফারেন্স থেকে যে টাকা আয় হতো সেটা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মৃতদাহ সৎকার ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে একাধারে বিলিয়ে দিয়েছেন কীর্তিমান পুরুষ এই সাধু বাবু। তার তত্ত্ববধানে অনেক রোগীর সাহায্যের জন্য শ্রী সিখান ক্লাবের উদ্যোগে নার্সিং এর জন্য লোক দেওয়া হতো। সাধু বাবুর এমন সুন্দর কাজ দেখে একদিন জিন্দাবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কালী প্রসন্ন ধর (যতি ধর) বেওয়ারিশ লাশ বহনের জন্য একটি গাড়ী প্রদান করেন।
১৯৪৬ সালে সাধু বাবু মিউজিক কনফারেন্স করান আরএনএ রিলিফ ফান্ডের জন্য। ওই মিউজিক অনুষ্ঠানে ভক্তিময় দাস, আলি হোসেন, কেরামত আলি, তারাপদ চক্রবর্তী, বেসু দত্ত, জগন্ময় মিত্রসহ বিভিন্ন নামকরা শিল্পীরা এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তারাপদ চক্রবর্তীর সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে ভারতের পুরবী মুখার্জি, মিনতি চ্যাটার্জিসহ বিভিন্ন শিল্পীবৃন্দও আসেন। এই সংগীত অনুষ্ঠানের সমস্ত খরচের পরে তাদের হাতে ১০ হাজার ১৪ টাকা থাকে। কলিকাতার রক্্ির সিনেমা হলে ফাংশন করে সাধু বাবু নেতাজি সুভাষের বড় ভাই শরৎ বসুর কাছে আইএনএ রিলিফ ফান্ডের জন্য তার কাকা বিনোদ লাল দাস (যিনি রিসেপশন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন) এর হাত দিয়ে এই ১০ হাজার ১৪ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। সাধু বাবুর আরেক কাকা বনবীর লাল দাস (তিনিও পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন) কায়েদে আজম জিন্নাকে পৌরসভার পক্ষ থেকে মানপত্র দেন এবং এর আগেও তিনি পন্ডিত জহুর লাল নেহরুকে মানপত্র উপহার দেন। এই জহুর লাল নেহরু ও তার স্ত্রী কমলা নেহরুকে নিয়ে তৎকালীন সময়ে সাধু বাবুর বাড়িতে আসেন। তখন সাধু বাবুর কাকিমা পারুল বালা দাসকে কমলা নেহরু কিছু টাকা দান করেন।
শুধু তাই নয় খান বাহাদুর মফিজুর রহমানকে পরাজিত করে তৎকালীন সময়ে লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান হন সাধু বাবুর বাবা শ্রী বীরেন্দ্রলাল। এই খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ছিলেন জেনারেল এমএজি ওসমানীর বাবা।
সাধু বাবুর জ্যাঠা (চাচা) এক সঙ্গে ১৫ বছর পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন। শেষ যখন তিনি চেয়ারম্যান পদের জন্য দাঁড়ান তখন আসামের মন্ত্রী বৈদ্যনাথ মুখার্জির বিপক্ষে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। তার জ্যাঠা তখন ঠিক ওয়ান্টেড মেম্বার ছিলেন আর তার ছেলে বিজন বিহারী দাস তখন হনারারি ম্যাজিস্ট্রেট হন।
তথ্যসূত্র: সাধু বাবুর পরিবারবর্গ থেকে তার ছেলে কুমার বাবু (সমাপ্ত)